× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিসিক নির্বাচন

সিলেট আওয়ামী লীগে বিভ্রান্তি, ক্ষোভ, হতাশা

চয়ন চৌধুরী, সিলেট

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩৬ পিএম

আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৩৮ পিএম

সিলেটের প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ফাইল ফটো

সিলেটের প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ফাইল ফটো

বিস্ময়, বিভ্রান্তি, ক্ষোভ ও হতাশা! সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মনে এখন এমন নানা দোলাচল। আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে হঠাৎ তাদের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর দলীয় টিকিট পাওয়ার গুঞ্জনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সিলেট-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারের নাম মেয়র পদে আলোচনায় আসার পর সবার মধ্যে ব্যাপক বিস্ময়, বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

অনেকদিন ধরে মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগরের নেতাদের অনুসারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ-হতাশা। সর্বশেষ দুটি সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। 

সিসিকের প্রথম মেয়র কামরান শেষ দুবারই বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। ২০২০ সালের ১৫ জুন জননন্দিত মেয়র কামরান করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম আলোচনায় আসে। গতবার মেয়র পদে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ।

এবারে আসাদের পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগরের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, প্রয়াত কামরানের ছেলে ও মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু। একাধিক প্রার্থীর মধ্যে বিভেদের আশঙ্কায় ‘বিকল্প’ হিসেবে মহানগরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদও আলোচনায় রয়েছেন।

বিগত নির্বাচনে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। এমনকি চার মাস আগে যখন দেশে আসেন, তখনও জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা বলেছিলেন। গত বছরের ৬ অক্টোবর দেশে পৌঁছে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আনোয়ার বলেছিলেন, ‘সাধ্যমতো বিশ্বনাথ ওসমানীনগরের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতে সিলেট-২ আসনের মানুষের পাশে থেকে এলাকার উন্নয়নে আমৃত্যু নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই।’

চলতি মাসের মাঝামাঝি হঠাৎ সিসিকের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রবাসী আনোয়ারের নাম আলোচনায় আসে। গত ২২ জানুয়ারি ওসমানী বিমানবন্দরে নামার পর সংবর্ধনার জবাবে আনোয়ার ‘সিলেটবাসীর জন্য কাজ করতে চাই’ মন্তব্য করে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার গুঞ্জন উস্কে দেন।

আনোয়ার মনোনয়ন নিশ্চিতের বিষয়ে সরাসরি না বললেও প্রধানমন্ত্রীর ‘গ্রিন সিগনাল’ পেয়ে তিনি মাঠে নেমেছেন বলে অনুসারীরা প্রচার করছেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আনোয়ার।

শুক্রবার সকালে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এর আগে সিসিকের মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা অনুসারীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের একজন বলেন, মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ কয়েকজন মাঠে রয়েছেন। নিজেদের মতো করে প্রচারণাও চলছে। এতে কার্যত দল সাংগঠনিকভাবে লাভবান হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, করোনা মহামারি, বন্যাসহ নগরবাসীর সুখে-দুঃখে আমরা পাশে রয়েছি। এখন বাইরের কাউকে মনোনয়ন দিলে তা সবাইকে হতাশ করবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়ে আসা হয়। মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (নগর-সদর) আসনে তিনি বড় ভাই প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বদলে নির্বাচন করেন। ড. মোমেন দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকলেও পারিবারিকভাবে তিনি নগরীর স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু মেয়র পদে ‘বহিরাগত’ কাউকে নগরবাসী মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে আনোয়ারুজ্জামান হয়তো বড় নেতা। সিলেট-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবেও তিনি সক্রিয় রয়েছেন। কিন্তু নগরীতে তো তিনি ভোটারও নন!

সিলেটে যোগ্যপ্রার্থীর কি অভাব পড়েছে- প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ভোটারদের কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে এলাকায় কাজ করার নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন মহানগরের এক নেতা। তা মনোনয়ন পাওয়া বলে প্রচারণাকে চরম মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেন তিনি। একইভাবে আনোয়ারের টিকিট পাওয়ার গুঞ্জনকে মিথ্যাচার আখ্যায়িত করে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির এক সদস্য বলেন, টানা নির্বাচন করার পরও কামরান ভাইকে (সাবেক মেয়র) মনোনয়ন নিশ্চিতের জন্য মনোনয়ন বোর্ডের সভা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। যেকোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার প্রক্রিয়া একই থাকে। এবারে নির্বাচন তফসিল ঘোষণার কয়েক মাস আগেই মনোনয়ন পেয়ে যাওয়ার প্রচার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। বিএনপির হয়ে টানা দুবারের সিসিক মেয়র আরিফুল হকের বিপরীতে জয় পেতে হলে দলীয় সংহতির পাশাপাশি বিভ্রান্তিমূলক প্রচার বন্ধের দাবি জানান তিনি।

এবার আনোয়ার দেশে আসার পর মহানগরের শীর্ষ নেতা বা মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাউকে ওসমানী বিমানবন্দরে দেখা যায়নি। ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ উপস্থিত নেতাদের সিংহভাগ ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা। মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে সহসভাপতি বিজিত চৌধুরী, জগদীশ দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান সাহা বিমানবন্দরে ছিলেন। গত অক্টোবরে আনোয়ার দেশে এলে মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী আসাদ উদ্দিন আহমদ ও জাকির হোসেনসহ তাদের অনুসারীরা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জাকিরের ঘনিষ্ঠ মহানগরের এক নেতা বলেন, দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়। এক্ষেত্রে প্রার্থী বা তার অনুসারী আগেভাগে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।

সিসিক নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, গত বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সময় আমি সাধ্যমতো নগরবাসীর পাশে ছিলাম। অন্যরাও ছিলেন। কই, তখন তো উনাকে (আনোয়ারকে) নগরবাসীর পাশে দাঁড়াতে দেখিনি। অতীতে সিসিক বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও উনার মেয়র হওয়ার স্বপ্ন বা এ-সংক্রান্ত তৎপরতা দেখিনি। এসবকে তাই প্রোপাগান্ডা বলে মনে করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা মহামারির সময় চরম ঝুঁকি নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মানুষের পাশে ছিলাম। এসব বিবেচনায় না নিয়ে প্রবাসী বা স্থানীয় নয়, এমন কাউকে দল মনোনয়ন দিলে তা সুফল বয়ে আনবে না। মহানগরের একজন সহসভাপতি বলেন, সারা বছর মাঠের রাজনীতি করব আমরা, আর বাইরের কেউ মেয়র নির্বাচন করবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। বর্তমানে একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকলেও প্রার্থী চূড়ান্ত হলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হবে।

গত নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী কামরানের পরাজয়ের নেপথ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভেদকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেই সময় বেশ কয়েকজন নেতাকে শোকজের পর একপর্যায়ে জেলা-মহানগরের কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এবার অনেক প্রার্থী মাঠে থাকায় দলের ঐক্য হুমকির মুখে পড়েছে বলে দাবি করে আনোয়ারের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, সম্ভবত বিভেদ ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী নতুন প্রার্থী দিয়ে চমক সৃষ্টি করতে চান। এখনও কয়েক মাস বাকি নির্বাচনের। এই সময়ে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করবেন আনোয়ার।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। অবশ্য ২২ জানুয়ারি ওসমানী বিমানবন্দরে সংবর্ধনা নেওয়ার পর মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার বলেছিলেন, এখনও দলীয় সিদ্ধান্ত আসেনি। তাই বলার কিছু নেই। তবে মনোনয়ন চাওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেছিলেন, আমি তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক কর্মী। প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কর্মী হিসেবে কাজ করতে চাই। মনোনয়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটা মাথা পেতে নেব। নগরীতে রাজনীতির অভিজ্ঞতার বিষয়ে বলেছিলেন, নির্বাচন নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি এই শহরেই বড় হয়েছি, পড়ালেখা করেছি। তাই সিলেট নগরীর মানুষ আমার আপনজন। 

এমন পরিস্থিতিতে মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও দলের তৃণমূলের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা দুজনেই বলেছেন, সিলেট সিটি নির্বাচনের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা