বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:২৯ এএম
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:৩৯ এএম
কালুরঘাট সেতু। ছবি: প্রবা
প্রায় শতবছরের পুরোনো জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু। একমুখী ও জরাজীর্ণ এ সেতু দিয়ে এপার থেকে ওপার যেতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় তাদের। প্রতিদিন হাজারো যানবাহনে অসংখ্য যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হন। কালুরঘাটে এ ভোগান্তি কমাতে নতুন সেতুর দাবিতে কম হয়নি আন্দোলন-সংগ্রাম ও কথার বচন। কিন্তু নতুন সেতুর পরিবর্তে নদীতে আবারও ফেরি চলাচলের ঘোষণা দেওয়ায় হতাশ হয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের আশঙ্কা সেতুর দাবি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই ফেরি চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে নতুন সেতুর বাস্তবায়নকে আরও ঝুঁকিতে ফেলবে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন সেতুর কাজ প্রক্রিয়াধীন। শুধু গাড়ির চাপ কমাতে ফেরির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. আবদুল মোমিন জানান, ফেরি সার্ভিস চালুকে আমরা কোনোমতেই পজিটিভ হিসেবে নিচ্ছি না। নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ফেরি হলে কথা ছিল না। এখন ফেরি হচ্ছে গাড়ির চাপ কমানোর জন্য। এতে বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না, সেতু নির্মাণ ফের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় চলে যাচ্ছে। ফেরিতে জনগণের ভোগান্তি কমছে না- এটা বাস্তবতা।
বোয়ালখালী উপজেলার একাধিক বাসিন্দা এই প্রতিবেদককে বলেন, কালুরঘাটে ফের ফেরিতে আমরা নাখোশ। নতুন করে আবার ফেরি চাই না। সেতুর দাবি নিয়ে তো অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। তাহলে আবার সেই ফেরিতে কেন ফিরতে হলো। তারা জানান, এর আগেও ২০০৪ সালে ১১ মাস, ২০১২ সালের ৪ মাস ফেরি দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তখন সবারই তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তারা আরও জানান, ফেরির ব্যবস্থা তাদের দাবিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার নতুন কৌশল ছাড়া আর কিছু না!
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ফেরি চালুর লক্ষ্যে দ্রুত কাজ চলছে। পূর্বপাড়ে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদ করা হয়েছে। চলছে নদীর ধারে গাইডওয়াল নির্মাণ। নদীর পশ্চিম পাড়ে তিনটি ফেরি এনে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কালুরঘাট সেতুতে যানজট ও নদী পারাপারকারীদের ভোগান্তি কমাতে কালুরঘাট সেতুর নিচ দিয়ে কর্ণফুলী নদীতে ফেরি চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সদর-২-এর উপসহকারী প্রকৌশলী আবু মো. ভুট্টে জানান, অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ শেষ হলেই ফেরি চালু হবে। ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তিনটি ফেরি মজুদ রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে দুটি চলাচল করবে, অপরটি রিজার্ভ থাকবে। আশা করি, ফেব্রুয়ারি মাসেই উদ্বোধন করা যাবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, এ ফেরি সার্ভিস চালুর মধ্য দিয়ে কালুরঘাট সেতুর উভয় পাশের যানজট কিছুটা কমবে। যানজট থেকেও কিছুটা মুক্তি মিলবে। আগের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা একপাশে অপেক্ষা করতে হবে না। তাদের দাবি, নতুন সেতু না হওয়া পর্যন্ত এর চেয়ে আর ভালো কোনো বিকল্প হতে পারে না।
জানা গেছে, ফেরি চলাচল শুরু হলে ট্রাক-বাসের মতো গাড়িগুলো ফেরিতে যাবে। আর কালুরঘাট সেতুতে চলাচল করবে রেল ও ছোট গাড়ি। অন্যদিকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন হিসেবে ব্যবহার হবে এ সেতু। কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালানোর উপযোগী করে তোলার জন্য বুয়েটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী নতুন নকশায় কালুরঘাট সেতু তৈরিতে সম্মতি দিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্র জানায়, নতুন সেতু নির্মাণের জন্য একনেকের অনুমোদন, টেন্ডার, ঠিকাদার নিয়োগ ও পরামর্শক নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করতে ২০২৩ সাল চলে যাবে। সেতু মেরামতের পর কালুরঘাট সেতু দিয়ে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।