হবিগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:২০ পিএম
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৪২ পিএম
আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। প্রবা ফটো
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের পাশে প্রায় তিন হেক্টর জায়গার ফলদ ও ভেষজ গাছ কেটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বন্যপ্রাণী পুড়ে মারা যাচ্ছে। চা-বাগান করতেই এই আগুন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বন বিভাগ বলছে, অনুমতি না নিয়েই এসব গাছ কাটা হচ্ছে। সিলেট বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাহুবলের রশিদপুর বন বিটের আওতাধীন ওই গির্জাঘর এলাকা হাতিমারা চা-বাগানের অংশ। বাগানটি ফিনলে চা কোম্পানির মালিকাধীন বলে জানিয়েছেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ধনাঞ্জয় চৌহান। অভিযোগ উঠেছে, নতুন চা-বাগান করতেই গাছ কেটে আগুন দেওয়া হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে হাতিমারা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মঈন উদ্দিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শ্রমিক নেতা ধনাঞ্জয় চৌহান জানান, ছয় দিন ধরে গাছ কাটা হয়েছে। ধরিয়ে দেওয়া আগুন আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চা শ্রমিক বলেন, ‘হাতিমারা চা-বাগানের মালিকপক্ষ কয়েকদিনে গির্জাঘর এলাকা থেকে অন্তত ১৪০টি গাছ কেটে নেয়। তারা প্রায় তিন হেক্টর জায়গাজুড়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। চাগাছ রোপণের জন্য টিলা কেটে সমতল করা হচ্ছে। কেটে নেওয়া গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, তেঁতুল, বট, আমলকী, বহেরা, আউলা ইত্যাদি।’
পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে কাজ করেন স্থানীয় রবি কাস্তে। তিনি সংগঠন মিতা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী। এই পরিবেশকর্মী বলেন, ‘কেটে নেওয়া গাছগুলো অর্ধশত ও শত বছরের পুরোনো। গাছগুলোর ফল প্রাণীদের খাদ্য। গাছ কেটে বনে আগুন দেওয়ায় বন্যপ্রাণীরা ছোটাছুটি করছে। লোকালয়ে এসে হামলা করছে বানরের দল। গাছ কেটে আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় কয়েক প্রজাতির বানর, হনুমান, মায়া হরিণ ও শূকরসহ নানা প্রজাতির প্রাণী আশ্রয় হারিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রাণী মারা গেছে।’
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের পাশে অবস্থিত গির্জাঘর এলাকাটি বনপ্রাণীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক প্রজাতির বানর, হনুমান, মায়া হরিণ ও শূকরসহ নানা প্রজাতির অনেক জীবজন্তুর প্রধান আশ্রয়স্থল এটি। গাছ কাটা ও আগুন দেওয়ায় বন্যপ্রাণীরা মারাত্মকভাবে হুমকিতে পড়েছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বন বিভাগের অনুমতি না নিয়ে এসব গাছ কাটা হচ্ছে। সিলেট বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাতিমারা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মঈন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। পরিচয় জানিয়ে এসএমএস করা হলেও সাড়া দেননি।