ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৪৫ পিএম
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৫৫ পিএম
বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা। প্রবা ফটো
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় প্রার্থী না থাকার পরও জমে উঠছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া আছেন আগ্রহের কেন্দ্রে। তবে ভোটের মাঠে না থেকেও আলোচনায় উঠে এসেছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা। অবশেষে তাকে নিয়ে মুখ খুলেছেন সাত্তার ভুঁইয়া। একই সঙ্গে রুমিকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগও।
দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে সাত্তার ভূঁইয়াদের সঙ্গে রুমিনও পদত্যাগ করেছিলেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন থেকে। একাদশ জাতীয় সংসদে নারী আসন থেকে বিএনপির একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। সংসদে ও সংসদের বাইরে সরকারের তীব্র সমালোচনা করে আলোচনায় আসা রুমিনের বাড়ি সরাইল উপজেলায়। গুঞ্জন রয়েছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হবেন তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে এলাকায় খুব পরিচিতি না থাকলেও ওই নির্বাচনের পর স্থানীয় পর্যায়ে অবস্থান গড়ে তুলেছেন তিনি। দলের স্থানীয় বিভিন্ন কার্যক্রমেও নিয়মিত দেখা মেলে তার।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ জানুয়ারি আশুগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সেমিনারে অংশ নিয়ে সাত্তার ভূঁইয়ার সমালোচনা করেন রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, বিএনপির ইমেজ নষ্ট করতে সাত্তারকে চাপে ফেলে নির্বাচনে আনা হয়েছে এবং যেকোনো ভাবেই হোক সরকার তাকে পাস করিয়ে আনবে। যে কারণে ওই আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও তা পরে তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
সাত্তার ভূঁইয়ার এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে রুমিন আরও বলেন, ‘বিএনপি এত বড় একটা দল, এত মানুষের সমর্থন, এত মানুষের ভালোবাসা, এখানে এক বা দুইজন মীর জাফরি করলো কি না তাতে কিচ্ছু যায় আসে না।’
উপ-নির্বাচনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাত্তারের পক্ষে মাঠে না নামার নির্দেশনা দিয়ে রুমিনে বলেন, কেউ তার পক্ষে কাজ করলে তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হবে।
রুমিনের এমন বক্তব্য নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) এ নিয়ে মুখ খুলেছেন বহুল আলোচিত আবদুস সাতত্তার ভুঁইয়া। সংসদ থেকে পদত্যাগ করার এক মাসেরও বেশি সময় যোগাযোগের বাইরে ছিলেন তিনি। অবশেষ গত বৃহস্পতিবার এলাকায় ফিরে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে রুমিনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমার বাপ-দাদা চৌদ্দ গোষ্ঠীও তাকে (রুমিন) চিনত না। তবে তার বাবাকে হআমরা চিনতাম। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অনুরোধে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য পদে রুমিন ফারহানার নাম প্রস্তাব করেছিলাম। আমার প্রস্তাবে এমপি হয়ে এখন তিনি আমার বিরুদ্ধে কথা বলছেন।’
রুমিনের অভিযোগ, সরকারের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে দল ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাত্তার। সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দল ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাত্তার বলেন, ‘সরাইল-আশুগঞ্জে আমার হাত ধরেই বিএনপির জন্ম হয়েছিল। দলের কেউ কোনও কিছুর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করিনি। কারণ মানুষ মান-সম্মানের জন্যই দল করে। বিএনপিতে যদি মানসম্মান না থাকে তাহলে কীভাবে দল করব। দল ও দলের নেতাকর্মীদের কাছে যথাযথ মূল্যায়ন পাইনি। তাই দল থেকে পদত্যাগ করেছি।’
সরকারের সঙ্গে সমঝোতার গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেও নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই সাত্তার ভুঁইয়ার সঙ্গে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এর আগে সাত্তারকে সুবিধা করে দিতে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের তিন নেতা। নির্বাচনের মাঠ ছেড়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীও।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় এই উপ-নির্বাচন ঘিরে বেশ তৎপরতা দেখাচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচন নিয়ে শুক্রবার সভা করেছে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। ওই সভা শেষে নির্বাচনের দিন রুমিন ফারহানাকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আশুগঞ্জ-সরাইলে যে উপ-নির্বাচন হচ্ছে এতে দলীয়ভাবে আমাদের কোন প্রার্থী নেই। এরপরও আসনটি যেহেতু বিএনপির ছিল, সেই প্রেক্ষাপটে বিএনপির নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা আশুগঞ্জে এসে একটি মিটিংয়ে তিনি নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের আহবান জানিয়েছেন। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যারা বিঘ্ন সৃষ্টি করে তাদেরকে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রয়োজনে তাদেরকে প্রতিহত করা আবশ্যক। সেই প্রেক্ষাপটে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সরাইল-আশুগঞ্জে যে উপনির্বাচন হবে, সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনে এবং প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার প্রয়োজনে প্রশাসনকে আমরা সহযোগিতা করবো। কোন ব্যক্তি বা বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করে, তাহলে আমরা আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের আহবান জানিয়েছি তাদের প্রতিহত করতে।’
তিনি আরও বলেন, রুমিন ফারহানা এসে তার দলের নেতাকর্মীদের উস্কে দিতে চেয়েছেন। উপনির্বাচনের সময় সে যদি সরাইল বা আশুগঞ্জের কোথাও আসে, তাহলে তাকে প্রতিহত করা হবে।
এ ঘোষণা দেওয়ার সময় আল মামুনের সঙ্গে ছিলেন আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছফিউল্লাহ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের এমন ঘোষণার ব্যাপারে রুমিন ফারহানার তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহবায়ক জিল্লুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের এমন ঘোষণার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।