কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:১১ পিএম
তুমব্রু সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রবা ফটো
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে থমথমে পরিস্থিতি কাটেনি। গেল দুদিন গোলাগুলির শব্দ না পাওয়া গেলেও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। পুলিশ বলছে, শূন্যরেখায় ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নানা সন্ত্রাসী গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে। তারা বাড়িঘরে আগুন দেওয়াসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। ক্যাম্পের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
গত বুধবার সকাল থেকে শূন্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি শুরুর পর মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলে যাওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা দুই শতাধিক রোহিঙ্গা তুমব্রু স্কুলে এখনও (শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত) অবস্থান করতে দেখা গেছে। আবার অনেক রোহিঙ্গা গোপনে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ। তবে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে শূন্যরেখা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বা অন্য কারও নিয়ন্ত্রণে নয়। ওখানে প্রকৃতপক্ষে কী হচ্ছে, কারা অবস্থান করছে, বলা যাচ্ছে না। ঘটনার পর অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। সিদ্ধান্তের পর রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শূন্যরেখায় সংঘাতের পর থেকে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প থেকে বাইরে যেতে না পারে এবং বাইরের কেউ ক্যাম্পে ঢুকতে না পারে সেজন্য এপিবিএনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, ক্যাম্পের প্রতিটি প্রবেশপথে স্বাভাবিকের চেয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরেও বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা।
বাইরে থেকে কোনো রোহিঙ্গার ক্যাম্পে প্রবেশের তথ্য তাদের কাছে নেই বলেও জানান তিনি।
৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের নানা সন্ত্রাসী গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে। এসব গোষ্ঠী বসতঘরে অগ্নিসংযোগ, আধিপত্য বিস্তারে খুন-হামলাসহ নানা অপরাধ ঘটাচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণে এপিবিএন আগে থেকে তৎপর রয়েছে। এখন নতুন করে সীমান্তে সংঘাতের জেরে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি ক্যাম্পের প্রবেশপথে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্টে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এর মধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে অবস্থান নিলেও কিছু রোহিঙ্গা শূন্যরেখার ক্যাম্পটিতে বসবাস করত। যে ক্যাম্পটিতে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়, আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা সহায়তা না করলেও আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট কমিটি (আইসিআরসি) সহায়তা করে আসছিল। আইসিআরসির তথ্যমতে, শূন্যরেখার ক্যাম্পটিতে ৬৩০টি ঘরে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস।
গত বুধবার সকাল থেকে শূন্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজন নিহত ও শিশুসহ দুজন আহত হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত বিজিবির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।