কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:১৬ পিএম
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:০৩ পিএম
তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় তল্লাশি জোরদার করেছে বিজিবি। প্রবা ফটো
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেওয়া আগুনে বেশিরভাগ বসতঘর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া বুধবার (১৮ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে গোলাগুলি বন্ধ থাকার খবর এসেছে। তবে সীমান্তে বসবাসকারীদের আতঙ্ক কাটেনি।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বুধবার মধ্যরাতের পর থেকে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। ঘটনা শূন্যরেখায় হওয়ায় সেখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। ফলে প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে এখনও সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।’
আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট কমিটির (আইসিআরসি) তথ্যমতে, তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পটিতে ৫৩০ ঘর ছিল। সেখানে ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করতেন।
ইউএনও রোমেন শর্মা বলেন, ‘যতটুকু জানতে পেরেছি, ৭০ থেকে ৮০টির মতো ঘর ছাড়া ক্যাম্পটির অধিকাংশ ঘর পুড়ে গেছে। এ অবস্থায় তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় তল্লাশি জোরদার করেছে বিজিবি।’
সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা এখনও চরম আতঙ্কে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ। তিনি বলেন, ‘শূন্যরেখার পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে রয়েছে। ঘটাস্থলের আশেপাশে কোনো মানুষ যাচ্ছেন না। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’
২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এর মধ্যে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। অনেকে বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় বাস শুরু করেন। তাদের সেখানে সহায়তা করে আসছিল আইসিআরসি।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৬টার পর থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ার শূন্যরেখায় দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয় বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা।
তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। ঘটনাটি শূন্যরেখায় হওয়ায় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সেখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। তবে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, বুধবার সকাল থেকে শূন্যরেখায় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। ঘটনার ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত নন। মিয়ানমারের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে তিনি জানতে পেরেছেন।
ওইদিন দুপুরে সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবক মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী। তা ছাড়া গুলিবিদ্ধ আরও দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহত হামিদ উল্লাহর মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আরেক গুলিবিদ্ধ মুহিব উল্লাহকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া আহত এক শিশু উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের পাশে প্যারিসভিত্তিক এমএসএফ (ডক্টরস উইদাউট বর্ডার) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গোলাগুলি চলা অবস্থায় বুধবার বিকালে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও রোমেন শর্মা। তিনি জানান, বুধবার বিকাল ৫টার দিকে ক্যাম্পে বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকেই তখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেন। আবার অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলে যান।
রোমেন শর্মা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে বাংলাদেশে প্রবেশকারীদের শূন্যরেখায় পাঠানো হতে পারে।’
এ বিষয়ে জানতে বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (বিজিবি-৩৪) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল ধরেননি।