সাভার (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:৫০ এএম
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:১৯ পিএম
সাভারের বিভিন্ন শিল্প কারখানার বর্জ্যের লাইন নদীর সঙ্গে সংযোগ থাকায় দূষিত হচ্ছে পানি। প্রবা ফটো
সাভারের অধিকাংশ শিল্পকারখানায় নেই ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) বা তরল বর্জ্য শোধনাগার। ফলে ডায়িংসহ বিভিন্ন কলকারখানার তরল বর্জ্যে প্রতিদিন দূষিত হচ্ছে নদী-খাল-বিল। চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে কৃষিজমি। হুমকির মুখে পড়েছে প্রাণ-প্রকৃতি।
সরেজমিন দেখা গেছে, সাভার উপজেলার কবিরপুর, জিরানী বাজার, টেঙ্গুরী, শ্রীপুর, চক্রবর্তী, জামগড়া, বেরন, সরকার মার্কেট, বাংলাবাজার, নরসিংহপুর, ঘোষবাগ, নিশ্চিন্তপুর, জিরাবো, কাঠগড়া, আশুলিয়া, নয়ারহাট, নলাম, পলাশবাড়ি, গাজীরচট, সাভার পৌর এলাকা, হেমায়েতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে শতাধিক শিল্পকারখানা।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কারখানার বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ইটিপি থাকার কথা। কিন্তু অধিকাংশ কারখানায়ই তা নেই। হাতেগোনা যে কয়টিতে আছে, সেগুলো নিয়মিত ব্যবহার করা হয় না। অনেকটা লোক দেখানোর জন্য রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু কারখানাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রশাসন বা সংস্থার কেউ পরিদর্শনে এলে তা চালু করা হয়।
এসব কারখানার বর্জ্য সরাসরি খাল-বিল-নদী-নালাসহ ফসলি জমিতে পড়ছে। পানির অত্যাধিক দূষণে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মাছশূন্য হয়ে পড়েছে এলাকার জলাশয়গুলো। নষ্ট হচ্ছে জমির ঊর্বরতা, চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে কৃষিজমি।
সরেজমিন দেখা গেছে, আশুলিয়ার নিউ এইচ অ্যাপারেলস, অবনী নিটওয়্যার ও নাফকো (প্রা.) লিমিটেডের দূষণের ফলে পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষকরা জমিতে ফসল আবাদ করতে পারছেন না। বাড়ইপাড়ার মাহমুদ গ্রুপের ডায়িংয়ের বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ফলে বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কবিরপুরের কৃষকরা।
তা ছাড়া পানি নিষ্কাশনের একমাত্র সরকারি খাল নাউ দারা ভরাট করে ফেলেছে কবিরপুরের স্পার্কল নিটওয়্যার। ফলে ওই কারখানাসহ একাধিক কারখানার তরল বর্জ্যে তলিয়ে গেছে আশপাশের ফসলি জমি।
জানতে চাইলে সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত হোসেন বলেন, বিভিন্ন কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্যে খাল-বিল ও নদী-নালার পানি দূষিত হচ্ছে। এসব তরল বর্জ্যে উপজেলার কৃষিজমির ঊর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জলাশয়ে মাছ ধরতে না পেরে অনেক জেলেকেই পেশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। বংশপরম্পরায় যারা এখনও এ পেশায় টিকে আছে, তাদেরকে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এমন একজন জেলে উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের গাজী খালের বাসিন্দা রাম প্রসাদ।
তিনি জানান, জাল ও লোকবল থাকার পরও খাল-বিলে মাছ না থাকায় তাকে পেশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। এখন হাটবাজারে সবজি বিক্রি করেন। একই কথা জানালেন মাহেন্দ্রসহ ওই পাড়ার অন্য জেলেরাও।
দূষণরোধে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়। জেল-জরিমানাসহ কারখানা সিলগালাও করা হয়। ফলে কয়েক দিন সেসব কলকারখানা বন্ধ বা ইটিপি চালু থাকে। কিন্তু কিছুদিন পর আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। অপরিশোধিত তরল বর্জ্য ফেলা অব্যাহত থাকে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘নতুন কারখানা স্থাপন করতে হলে আমাদের দপ্তরে পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হয়। আমরা যাচাই-বাছাই করে নিয়ম মেনে ছাড়পত্র দিয়ে থাকি। পরে সে অনুযায়ী কারখানা না চালালে বা ইটিপি ব্যবহার না করলে তা দেখভাল করার জন্য আমাদের মনিটর সেল রয়েছে।’
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক কবির আহমেদ বলেন, ‘যেসব ডায়িং কারখানায় ইটিপি নেই, অভিযানের সময় সেগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়। আর ইটিপি থাকার পরও যারা সঠিকভাবে ব্যবহার করে না, আইন অনুযায়ী তাদের জরিমানা করা হয়। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’