নওগাঁ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:০০ পিএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৩৩ পিএম
ঠান্ডাজনিত কারণে নওগাঁর হাসপাতালে বাড়ছে শিশুরোগীর সংখ্যা। প্রবা ফটো
এক সপ্তাহ ধরে নওগাঁয় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। কখনও ঘন কুয়াশা, কখনও তীব্র ঠান্ডা বাতাসে মানুষ জুবুথুবু হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
জেলার হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাওলাইটিস, অ্যাজমা, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। হাসপাতালে শয্যা সংকটসহ নানা কারণে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
নওগাঁ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত সাত দিনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৬৮ শিশু। আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১৭৫ জন । অর্থাৎ, প্রতিদিন ৩৪ জনের বেশি শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যা ১২টি হলেও শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৮৫ জন। শয্যা সংকটের কারণে একই বেডে দুজন-তিনজন করে শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেকে শয্যা না পেয়ে ওয়ার্ডের মেঝে এবং হাসপাতালের করিডোরের মেঝেতে শিশুকে রেখে চিকিৎসা করাচ্ছেন।
নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া এলাকার বাসিন্দা শেফালী আক্তার দুদিন ধরে হাসপাতালের মেঝেতে শয্যা নিয়ে সাড়ে তিন বছর বয়সি মেয়ে জেসমিনকে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো সিট খালি নেই। হাসপাতালে প্রতিদিন এত অসুস্থ বাচ্চা আসছে ভাবা যায় না। শ্বাসকষ্টের শিশুরোগী বেশি হওয়ার কারণে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য লাইন ধরে থাকা লাগতেছে।’
আট মাসের শিশু জোবায়েরের পুরো শরীরে গরম কাপড় জড়ানো। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শের পর জোবায়েরকে হাসপাতালে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তার বাবা-মা। জোবায়েরের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চার-পাঁচ দিন ধরে ছেলে অসুস্থ। জ্বর-কাশি কিছুতেই কমছে না। সর্দির কারণে বুকের দুধও ঠিকমতো খেতে পারছে না। জরুরি বিভাগে চিকিৎসককে দেখানোর পর চিকিৎসক বলেছেন, আমার ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
শিশু ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ নার্স রোজিনা আক্তার বলেন, অন্যান্য সময়ে শিশু ওয়ার্ডে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে ভর্তি থাকে। সেখানে এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ শিশু ভর্তি থাকছে। ফলে চিকিৎসকদের পাশাপাশি এত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
শুধু নওগাঁ সদর হাসপাতালেই নয়, জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৪৪৮ জন। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু।
সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রতন কুমার সিংহ বলেন, ‘শীতের সময়টাতে শিশুদের ব্রঙ্কাওলাইটিস, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। সাধারণত হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী ভর্তি থাকে। কিন্তু ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে সেই সংখ্যা দ্বিগুন হয়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।,
তবে ঠান্ডাজনিত রোগ হলেই বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এ সময়টাতে শিশুদের গরম পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো অব্যাহত রাখতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। মায়েদেরও ঠান্ডা লাগানো যাবে না বলেও পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
নওগাঁর সিভিল সার্জন আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান বলেন, 'এক সপ্তাহে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫০০-এর অধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়াকে ঠিক অস্বাভাবিক না বললেও অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই সংখ্যা বেশি। তবে এটা এখনও প্রাদুর্ভাব পর্যায়ে যায়নি। পরিস্থিতি আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ ও রোগীদের জন্য কম্বল রয়েছে।'
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ১৩ দিনে নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কখনও ১০ ডিগ্রির মধ্যেই ছিল। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।