বান্দরবান প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৪২ পিএম
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৩৫ পিএম
পুড়িয়ে দেওয়া ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে এক পরিবার। প্রবা ফটো
বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেঙয়েন কার্বারি ম্রো পাড়ায় অগ্নিসংযোগ, হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ ওঠার ৭ দিন পর মামলা করেছেন গ্রামপ্রধান (কার্বারি) রেঙয়েন ম্রো। মামলায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের প্রকল্প পরিচালক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ১৫০ থেকে ১৭০ জন।
রবিবার (৮ জানুয়ারি) সকালে লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শনিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মামলাটি করা হয় বলে জানান তিনি।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের প্রকল্প পরিচালক কামাল উদ্দিনকে। অন্য আসামিরা হলেন, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক আরিফ হোসেন, উপব্যবস্থাপক আব্দুল মালেক এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. নুরু, দেলোয়ার হোসেন, দুর্যোধন ত্রিপুরা, হাজিরাম ত্রিপুরা ও মহসিন রেজা।
ওসি শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, শনিবার সন্ধ্যায় ম্রো পাড়ার কার্বারি রেঙয়েন ম্রোসহ ৫ থেকে ৬ জন গ্রামবাসী থানায় এসে মামলা করেন। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তা ছড়া হামলায় সরাসরি জড়িত সন্দেহে ১৫০ থেকে ১৭০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।
গত ১ জানুয়ারি মধ্যরাতে ৫ থেকে ৬টি ট্রাকে করে বহিরাগত দেড় শতাধিক লোকজন এসে ম্রো পাড়ায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের। তখন পাড়াপ্রধান রেঙয়েন কার্বারি অভিযোগ করেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত দেলোয়ার, নুরু ও মহসিনের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে।
তবে ওইদিন লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের প্রকল্প পরিচালক কামাল উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গ্রামে আগুন ও হামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
তার দাবি, ‘গ্রামবাসীরা আমাদের ৪০০ একর জায়গায় ঘর তৈরি করছে। এ জায়গা আমাদের, তাদের না। তাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
চার দিন পর ৫ জানুয়ারি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হামলার অভিযোগ সত্য বলে জানায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের সদস্য কংজরী চৌধুরী বলেন, ‘গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরে তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে মানবাধিকার কমিশন। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে কমিশন।’
অভিযোগ ওঠার সাত দিন পর মামলার বিষয়ে লামা থানার ওসি শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘হামলার ঘটনা শোনার পর পাড়ায় গিয়েছি। থানা থেকে পুলিশ পাঠিয়েছি। গ্রামবাসীদের কয়েকবার বুঝিয়ে থানায় এসে মামলা করতে বলেছি। সাত দিন পর তারা থানায় এসে মামলা করলেন।’
মামলা করতে দেরি হওয়ার বিষয়ে পাড়ার কার্বারি রেঙয়েন ম্রো বলেন, ‘পাড়ায় আগেও অনেকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। জুম বাগান পুড়িয়ে দেওয়া, বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুর, গাছ কেটে ফেলা, খাবার পানির ঝিরিতে বিষ মেশানোসহ এমন অনেক ঘটনা আমাদের সঙ্গে ঘটেছে। এসব বিষয়ে থানায় অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘পূর্বে এমনও হয়েছে থানায় অভিযোগ দিয়ে এসে বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার আগেই আমরা হামলার শিকার হয়েছি। রাবার কোম্পানির লোকজন পাড়ার আশেপাশের রাবার বাগানে লুকিয়ে থেকে আমাদের ওপর নজরদারি করে। তাদের ভয়ে এতদিন মামলা করিনি। মানবাধিকার কমিশন আশ্বস্ত করায় মামলা করতে সাহস পেলাম।’