মধ্যাঞ্চলীয় ব্যুরো
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:১০ পিএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:২৭ পিএম
ছবি : প্রবা
তীব্র শীতের কারণে জেলেরা হাওর ও নদীতে মাছ শিকার করতে পারছেন না। নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। ফলে দেশি মাছের ভান্ডারখ্যাত কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন আড়ত ও বাজারে কমে গেছে মাছের সরবরাহ। বেড়েছে দামও। মাছ শিকার করেতে না পারায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে জেলে সম্প্রদায়। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে তাদের জীবন ও জীবিকা।
ইটনা উপজেলার জেলেপাড়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তীব্র শীতে মাছ শিকার করতে গিয়ে রতন বর্মন, দীপংকর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তাই জেলে অধ্যুষিত গ্রামগুলোর অধিকাংশ জেলেরা শীতের মধ্যে মাছ শিকারে যাচ্ছেন না। ঘাটে নৌকাগুলো অলস পড়ে আছে। শীত কমে গেলে বা উষ্ণ আবহাওয়ার আভাস পেলে তারা নৌকা নিয়ে মাছ শিকারে যাবেন।
জেলা শহরের খরমপট্টি এলাকার বাসিন্দা মুনসুর আলম বুলবুল বলেন, গত দুইদিন শহরের পুরোনো থানা বাজারে গিয়ে মিঠাপানির দেশি মাছ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ফিসারিতে উৎপাদিত মাছের প্রাধান্য লক্ষ করা গেছে। বাধ্য হয়ে ফিসারির মাছ কিনতে হয়েছে। তার মতো একই ভাষ্য শহরের অন্যান্য বাসিন্দাদেরও।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল জানিয়েছেন, তীব্র শীতের কারণে জেলেরা স্বাভাবিকভাবে মাছ শিকার করতে পারছে না। শীত তাদের বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। তাই এ মৌসুমে যে পরিমাণ মাছ বাজারে আসার কথা, তা আসছে না। তবে এটা সাময়িক, শীতের তীব্রতা কমে গেলে মাছের সরবরাহ বেড়ে যাবে।
জেলার করিমগঞ্জের বালিখলা মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, মাছের মোকাম বালিখলায় প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি টাকার মাছ বিক্রি হতো। কিন্তু মাছের সরবরাহ কম থাকায় গত সপ্তাহ থেকেই বিক্রি কমে গেছে। এখন এক কোটি টাকা বিক্রি হচ্ছে। এমন অবস্থা ভৈরবসহ অন্যান্য মোকামেও।
বালিখলা মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হারেছ মিয়া জানান, হাওরে তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে জেলেরা মাছ শিকার করতে না পারায় মোকামে মাছ আসা কমে গেছে। ফলে জেলে সম্প্রদায়ের লোকজনের যেমন আয়-রোজগার কমেছে, তেমনি বাজারের ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও কমে গেছে।
তিনি আরও জানান, বাজারে মাছ বিক্রি করে এলাকার হাজারো জেলে পরিবার ও মাছ ব্যবসায়ীরা সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করত। কিন্তু গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে তাদের পকেটে টান পড়েছে।
ইটনা জেলেপাড়ার হরিচরণ দাস, অভিনব দাসসহ কয়েকজন জেলে জানান, শীতের কারণে গত এক সপ্তাহ মাছ শিকার করতে না পারায় তাদের জমানো টাকা দিয়ে বাজার করেছেন। এখন জমানো টাকা শেষ, তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাদেরকে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে গ্রাম ছাড়তে হবে। না হয় সরকারের সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন হবে।
কাচারি বাজারের মাছের আড়তদার গোপাল নন্দী বলেন, গত কিছুদিন ধরে মাছ কম আসায়, তাদের ব্যবসায় মন্দা চলছে। তবে, শীত কমলে অবস্থা ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ইটনা উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান জানান, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে জেলেরা মাছ শিকারে যেতে পারছে না। ফলে অনেক জেলে পরিবার আর্থিক অনটনে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদেরকে চাল-ডাল সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে পরিষদের এ মাসের সভায় আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মিঠামইন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আকন্দ বলেন, শীত ও কুয়াশায় কাহিল জেলে সম্প্রদায়ের জীবন। এ অবস্থায় তারা গভীর হাওর ও নদীতে মাছ আহরণ করতে না পারায় আর্থিক সংকটে পড়েছে। সেই সঙ্গে বাজারে দেশি মাছের সরবরাহও কমে গেছে। ফলে মাছ শিকারি ও ব্যবসায়ী দুপক্ষই আর্থিক ক্ষতির মধ্যে আছে। আবহাওয়া অনুকূল হলে অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে তিনি মনে করেন।