× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মেঘনায় ছড়িয়ে পড়েছে ১১ লাখ লিটার তেল, মারাত্মক দূষণের শঙ্কা

ভোলা সংবাদদাতা

প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৪৬ পিএম

আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৩২ পিএম

মেঘনায় ডুবে যাওয়া জাহাজের তেল নিষ্কাশনের কাজ বন্ধ থাকায় মারাত্মক পরিবেশ দূষণের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ছবি : প্রবা

মেঘনায় ডুবে যাওয়া জাহাজের তেল নিষ্কাশনের কাজ বন্ধ থাকায় মারাত্মক পরিবেশ দূষণের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ছবি : প্রবা

নিষ্কাশনের কাজ বন্ধ থাকায় ভোলার মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে বিস্তীর্ণ এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়েছে। তলা ফেটে যাওয়ায় জাহাজটি থেকে পানিতে ভেসে গেছে ১১ লাখ লিটার ডিজেল ও অকটেন। এতে ইলিশ মাছের ক্ষতিসহ মারাত্মক পরিবেশ দূষণের শঙ্কা জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। ইতোমধ্যে তেলের দুর্গন্ধের কারণে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না জেলেরা। 

এদিকে তেলবাহী জাহাজটি ডুবে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এটি উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। জাহাজডুবির পর থেকে বিআইডব্লিটিএ এবং কোস্টগার্ডসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় দিনেও কোনো অভিযান চালানো হয়নি। এর কারণ হিসেবে রবিবার বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছিল জাহাজটি উদ্ধারের সক্ষমতা নেই তাদের।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) ডুবে যাওয়া জাহাজ সাগর নন্দিনী-২-এর মাস্টার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘দুর্ঘটনার দিন শুধু এক-দেড় হাজার লিটার তেল উদ্ধার হলেও বাকি সব তেল পানিতে ভেসে গেছে। এতে প্রায় ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ 

স্থানীয়রা জানান, রবিবার কোস্টগার্ড পানি থেকে তেল নিষ্কাশনের কাজ করলেও এখন সেটি বন্ধ রয়েছে। 

তেল ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে পরিবেশকর্মী নজরুল হক অনু বলেন, ‘তেল দ্রুত অপসারণ করা না হলে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিশেষ করে যারা এ পানি ব্যবহার করছে। এ ছাড়া ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে সাগরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। তাই বলা যায়, এর প্রভাব সাগরেও পড়বে। তবে এখনই নিশ্চিত করে ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা ওবায়দুল্লা বলেন, ‘এই তেল ছড়িয়ে পড়লে মাছের মারাত্মক ক্ষতি হবে। বিশেষ করে মাছের প্রজনন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন কমে যাবে।’

এ বিষয়ে ভোলা পরিবেশে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. তোতা মিয়া বলেন, ‘জাহাজের তলা ফেটে তেল বেরিয়ে গেছে। এতে জলজ প্রাণী এবং ছোট উদ্ভিদ ফ্লোরাফনা ধ্বংস হবে। এতে বায়ো-ডায়ভার্সিটির ওপর প্রভাব পড়বে। এই ঘটনা বড় ধরনের ক্ষতি, যা সাধারণ চোখে দেখা যায় না। দ্রুত জাহাজ থেকে তেল অপসারণ করা না হলে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশালের সমন্বয়কারী রফিকুল আলম ব‌লেন, ‌জ্বালানি তেলসহ জাহাজ ডুবিতে মেঘনার মৎস্য ও জলজ সম্পদের বড় ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। অপরিশোধিত তেল পানির উপরের অংশের অক্সিজেন ধ্বংস করে দেয়। এতে পানির নিচে থাকা মৎস্য ও জলজ সম্পদ নস্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে‌ছে।’

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জাহাজটি ধীরে ধীরে পুরোপুরিভাবে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত উদ্ধার করা না হলে পুরোপুরি তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিআইডব্লিটিএর ডুবুরি ইমাম হোসেন বলেন, ‘জাহাজটি বর্তমানে পানির ৫৫ ফুট নিচে রয়েছে।’

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে জাহাজের মাস্টার মাসুদুর রহমান  বলেন, ‘জাহাজ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে সাগর বধূ-৩ নামের একটি জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। আরেকটি বিকালের মধ্যে পৌঁছাবে।’

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সাড়ে ১১ লাখ লিটার তেল নিয়ে চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসে জাহাজ এমভি সাগর নন্দিনী-২। রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি-সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার কারণে সেটি অন্য এক জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে জাহাজের তলা ফেটে মুহূর্তেই মেঘনায় তেল ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। 

মৎস্য পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, মেঘনায় জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর ছড়ানো তেল পরিবেশের ক্ষতি যা করার করে ফেলেছে। নদীর তেল ছড়িয়ে পড়বে সাগরে। এই ক্ষতির প্রভাব হয়ত আরও কিছুদিন পরে বোঝা যাবে। ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদনে এটি প্রভাব ফেলতে পারে। প্রভাব ফেলবে নদীর অন্যান্য জীববৈচিত্রেও। এছাড়া সাগরে যাওয়ার পর সেটি আরও বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এর ফলে নদী ও সাগরের বাস্তঃসংস্থানে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল সাগরে গিয়ে পড়বে। এর ফলে সামনের মৌসুমে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের প্রজননে প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে নদী ও সাগরের বাস্তুঃসংস্থানে প্রভাব ফেলবে। তাছাড়া জেলেদের স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এর আগেও বঙ্গোপসাগরে তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জলজ পরিবেশের। সরকারের উচিত জাহাজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। একই সঙ্গে জাহাজ ডুবির কারণগুলো অনুসন্ধান করেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। বহিঃবিশ্বেও এই ঘটনাটা প্রচার হবে। এতে দেশের ভাবমূর্তিতে প্রভাব পড়বে।’ 

ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধারে বিআইডব্লিটিএয়ের সক্ষমতা নেই বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির যুগ্ম পরিচালক মো. আব্দুস সালাম। 

তিনি বলেন, ‘আমরা জাহাজটি মালিকপক্ষকে ব্যক্তি-উদ্যোগে উদ্ধার করতে বলেছি, কারণ এটির ওজনের সঙ্গে উদ্ধারের সক্ষমতা নেই। তবে তেলের কারণে কিছু প্রভাব তো পড়ছেই।’

বিআইডব্লিউটিএয়ের ভোলা অফিসের সহকারী পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজের ওজন অনেক বেশি। ২৪ ঘণ্টায় এটি উদ্ধার করা সম্ভব না। ডুবে যাওয়া জাহাজের মালিকের নিজস্ব উদ্ধার জাহাজ আছে। সেই জাহাজ ঘটনাস্থলে যাচ্ছে। তবে কতক্ষণে পৌঁছবে তা নিশ্চিত করে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। আশা করছি দ্রুত জাহাজটি সরানো সম্ভব হবে। তবে নৌ-চলাচল এখনও স্বাভাবিক আছে। জাহাজটি ডুবে গেলেও নদীপথ সচল রাখা হয়েছে বিআইডাব্লিউটিএয়ের পক্ষ থেকে। যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে লাল বাতি লাগানো হয়েছে ডুবে যাওয়া জাহাজটির আশপাশে।’

বিআইডব্লিউটিএয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. সেলিম জানান, তাদের উদ্ধারকারী জাহাজের ওই জাহাজ উদ্ধারের সক্ষমতা নেই। এর কারণ হিসাবে জানান, বরিশালে বিআইডব্লিউটিএয়ের উদ্ধারকারী জাহাজ ‘নির্ভীক’ ২৫০ মেট্রিক টন ওজনের জাহাজ তুলতে সক্ষম। অপরদিকে ডুবে যাওয়া জাহাজটিরই ওজন ৩৩০ মেট্রিক টন। ভর্তি থাকা জ্বালানি ও জাহাজে পানি ঢুকে ওজন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় মালিকপক্ষ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে উদ্ধার করতে পারলে বিআইডব্লিুউটিএ সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, মালিকপক্ষের উদ্যোগে একটি কোস্টাল জাহাজ ও একটি তেলের ট্যাংকার দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। ওই দুটি নৌযান দিয়ে টেনে ডুবে যাওয়া জাহাজটি তীরে আনার পরিকল্পনা চলছে। এরপরে জ্বালানি তেল ও পানি অপসারণ করার পর ওজন কিছুটা কমলে সেটি উদ্ধারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। মঙ্গলবার দুটি জাহাজ দিয়ে ডুবে যাওয়া জাহাজটি টেনে তীরে আনার কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।

এদিকে এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন এবং পদ্মা অয়েল কোম্পানির পক্ষ থেকে আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

জাহাজডুবির ঘটনায় গঠিত কমিটির তদন্ত কর্মকর্তা ও পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিজিএম আসিফ মালেক বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটি উদ্ধারের পর বলা যাবে জাহাজে কী পরিমাণ তেল অবশিষ্ট আছে এবং আসলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে কি না।’

ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তামিম আল ইয়ামিন বলেন, ‘আমরা এখনও তদন্ত কমিটি গঠন করিনি। তবে দ্রুত গঠন করা হবে। এদিকে জাহাজটি উদ্ধার এবং নিরাপত্তায় দ্বিতীয় দিনের মতো কাজ করছে কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিটিএ।’

বিআইডব্লিটিএর যুগ্ম পরিচালক (উদ্ধার) মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘জাহাজটির ফিটনেস ছিল কি না সেটি যাচাইয়ের কাজ চলছে।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা