ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৫৩ পিএম
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৪০ পিএম
রাণীশংকৈলের রামরাই দীঘিতে অতিথি পাখির ঝাঁক
ঠাকুরগাঁও সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাণীশংকৈল উপজেলা। এ উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন রামরাই দীঘি। শীতে প্রতিবারের মতো এবারও এ দীঘিতে ভিড় জমিয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রামরাই দীঘিটি এখন অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত প্রান্তর। অতিথি পাখি দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন জেলার হাজারো দর্শনার্থী।
শীতের শুরু থেকেই বিভিন্ন দেশ থেকে এসব পরিযায়ী পাখি আসতে থাকে এ দীঘিতে। এখন পুরো দীঘির জলাশয় সেজেছে নতুন সাজে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাখি ও জলাশয়ের প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। প্রতি বছর শীত এলেই এসব পাখি এখানে এসে প্রকৃতিকে সাজায় নতুন সাজে।
এ বছরও ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে রামরাই দীঘিতে। পাখিদের কলকাকলিতে পুরো এলাকা মুখরিত। পাখিপ্রেমী ও সৌন্দর্যপিপাসুরা পাখিগুলো দেখার জন্য ছুটে আসছেন প্রতিনিয়ত।
রামরাই দীঘির পানিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মিলছে অতিথি পাখির। সন্ধ্যা নামলেই দীঘিপাড়ের লিচুবাগানে আশ্রয় নেয় এসব পাখি।
এ দেশের নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়ে শীতে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে রামরাই দীঘিতে আসে পাখিগুলো। উপজেলা শহর থেকে ৪ কিমি দূরে উত্তরগাঁও গ্রামের কাছেই বরেন্দ্র অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাশয় রামরাই দীঘির অবস্থান।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা থেকে অতিথি পাখি দেখতে এসেছেন সালাম হক। তিনি বলেন, ‘অনেক লোকের মুখে শুনছি যে রাণীশংকৈল উপজেলার রামরাই দীঘিতে প্রতি বছর অতিথি পাখি আসে, তাই আমিও চলে এলাম পাখি দেখতে। দেখে তো আমি পুরোই মুগ্ধ। অনেক অতিথি পাখি এ পুকুরে দেখে মনটা জুড়িয়ে গেল।’
স্থানীয় বাসিন্দা নোমান বলেন, প্রতি বছর নভেম্বরে অতিথি পাখি আসা শুরু হয় রামরাই দীঘিতে। শীত বেশি পড়লে পাখির সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। শীতের শেষ পর্যন্ত এ দীঘিতে অবস্থান করে পাখিরা। এ সময় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক মানুষ আসে দেখতে।
ঠাকুরগাঁও সদর থেকে অতিথি পাখি দেখতে এসেছেন বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘পাখিগুলো অনেক দূর থেকে আসে, তাই দেখতে আসছি। শুধু আমি না, আমার মতো অনেকে আসছে পাখি দেখতে। অনেক পাখি দীঘিতে। নৌকা দিয়ে কাছ থেকে পাখিগুলো দেখলাম, ভালো লাগছে অনেক।’
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আবু রায়হান বলেন, ‘এই শীত মৌসুমে অনেক দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসে অতিথি পাখি দেখতে। পাখিরা সকালে একবার দীঘিতে আসে, কিছু সময় অবস্থান করার পর বিভিন্ন বিলে চলে যায়। পরে বিকালে আসে। সন্ধ্যার পর পর্যন্ত থাকে। অন্ধকার হলেই দীঘির চারপাশে যে লিচু গাছ আছে সেই গাছে ফিরে যায়।’
বীরগঞ্জ থেকে বড় ভাইয়ের সঙ্গে অতিথি পাখি দেখতে এসেছে ঊর্মি আক্তার। সে বলে, ‘এই পুকুরে এত অতিথি পাখি আসছে যা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। ছোট, বড় অনেক রংবেরঙের পাখি দেখে অনেক ভালো লাগছে।’
দীঘির মাছ চাষি কাউসার কাঁকন বলেন, ‘অতিথি পাখির কোলাহলে এখন মুখরিত রামরাই দীঘি। অনেক পাখিপ্রেমী আসছেন প্রতিনিয়ত। এতে মাছ চাষে আমাদের একটু সমস্যা হলেও অতিথি পাখি দেখে মন ভরে যাচ্ছে। পাখির যেন সুন্দর একটি অভয়ারণ্য গড়ে ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখছি। কেউ যেন পাখি শিকার না করতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসনসহ আমরা সর্বদা নজরদারি করছি।’
রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, ‘৪২ একর জায়গায় জুড়ে রামরাই দীঘির অবস্থান। প্রতি বছর অনেক দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি আসে এখানে। আর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ পাখি আর দীঘির মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছেন। দীঘির আশপাশে কেউ পাখি শিকার করতে পারবে না, আমরা নিয়মিত তদারক করছি।’