চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:১৮ পিএম
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:১৮ পিএম
চট্টগ্রামের বিজয় মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়। ছবি : প্রবা
বেলা ১২টা। মেলায় ঢুকতেই চোখে পড়ল পাঁচ তরুণ জড়ো হয়ে সেলফি তুলছেন। সামনে গিয়ে কথা বলতেই জানালেন, তারা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) পরীক্ষা শেষ হওয়ায় বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন মেলায়।
শুধু এই পাঁচ তরুণ নয়, বুধবার মেলায় ঘুরতে এসেছেন আরও অনেক তরুণ-তরুণী। কেউ এসেছেন বন্ধু, বান্ধবীদের সঙ্গে; কেউ এসেছেন পরিবারের সঙ্গে। আর তাতেই জমে উঠেছে চট্টগ্রাম নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে আয়োজিত মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা।
মঙ্গলবার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ায় আজ মেলায় দর্শনার্থীর ভিড় বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে মেলায় যে সংখ্যায় দর্শনার্থী আসছেন, সে অনুযায়ী বেচাকেনা নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এবার মেলায় বেচাকেনা খুব কম। অনেক দর্শনার্থীই মেলায় ঘুরতে আসছেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা তিশা জামদানি স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ শাহীন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এবার বেচাকেনা তুলনামূলক কম। অন্যান্য বছর মেলার এক সপ্তাহ, দশদিনের সময় যে বেচাকেনা হতো, এবার তার অর্ধেকও হচ্ছে না। আগে যেখানে এ সময় এক লাখ টাকার বেশি বেচাকেনা হতো, এখন সেখানে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা বেচাকেনা হচ্ছে।’
স্কুল, কলেজ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় এতদিন মেলায় দর্শনার্থী কম ছিল বলে তিনি জানান।
১৯৮৯ সাল থেকে বিজয় মেলার আয়োজন করে আসছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদ। এবার ৩৪তম বারের মতো মেলা আয়োজন করছে সংগঠনটি। মাসব্যাপী এই মেলায় গৃহস্থালির জিনিসপত্রের পাশাপাশি মেয়েদের কাপড়-চোপড় ও জুয়েলারি দোকান নিয়ে বসেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
নগরীর আউটার স্টেডিয়াম মাঠে আয়োজিত মেলায় এবার অন্তত ২০০টি স্টলে গৃহস্থালির জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনা, মেয়েদের জুয়েলারি, কসমেটিক্স, শাড়ি, নকশিকাঁথা, থ্রি-পিস, জুতাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দোকানিরা। মেলায় বসেছে বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান। আছে আচার, শীতের পিঠা ও মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্রের দোকান।
মেলায় গিয়ে দেখা যায়, দুপুর থেকেই মেলায় ভিড় করতে শুরু করেছেন দর্শনার্থীরা। বিশেষ করে মেয়েদের জুয়েলারি, থ্রি-পিস আর গৃহস্থালি আসবাবপত্রের দোকানে খুব বেশি ভিড় দেখা গেছে।
পাঁচ বন্ধুর সঙ্গে মেলায় এসেছেন সিয়াম। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘কাল এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তাই সকালে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছি। দুপুর পর্যন্ত সিআরবিতে ছিলাম। কিছুক্ষণ আগে মেলায় এসেছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেব।’
দুই বান্ধবীর সঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসেছেন সুমাইয়া আক্তার। রুপন অ্যান্ড বিউটি স্টোরের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, কলেজে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বান্ধবীদের সঙ্গে মেলায় এসেছেন। পছন্দ হলে কিছু কেনাকাটা করবেন। না হয় বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে যাবেন।
এদিকে মেলায় দর্শনার্থীর ভিড় বাড়লেও দোকানদাররা জানাচ্ছেন এবার বেচাকেনা অনেক কম। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষ না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে গত ১৪ দিন ধরে মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক। যে কারণে এ সময় মেলায় বেচাকেনা খুব বেশি হয়নি। তাই অনেক দোকানদার কিছুটা হতাশায় ভুগছেন। তারা বলছেন, সামনের দিনগুলোতে বেচাকেনা না বাড়লে এবার তাদেরকে লোকসান গুনতে হবে।
গত ২১ বছর ধরে মেলায় কোর্ট, ব্লেজারের দোকান নিয়ে আসছেন ‘সিভিল র’। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মিঠু আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার মেলায় বেচাকেনা খারাপ যাচ্ছে। এবার বেচাকেনা কম হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে, বিশেষ করে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম আগমনকে কেন্দ্র করে দুই দিন মেলা বন্ধ ছিল। তা ছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা এখনও শেষ হয়নি। যে কারণে মেলায় এতদিন লোক সমাগম কম ছিল। সে কারণে বেচাকেনা কিছুটা কম।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একেবারে হতাশ এমন না। আশা শেষ এরকম না। আমরা এখনও আশায় আছি। বাকি যে কয়দিন আছে, এই কয়দিনে আমরা সেটি ওভারকাম করে আসব।’
শিশুদের খেলনার স্টল নিয়ে এসেছেন হাটহাজারীর জিন্নাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এর আগে কখনও মেলায় দোকান করা হয়নি। আগে এনজিওতে চাকরি করতাম। চাকরি ছেড়ে এবার বন্ধুর সঙ্গে শেয়ারে মেলায় দোকান দিয়েছি। মেলায় বেচাকেনা খুব কম। গত ১০/১২ দিনে যা বিক্রি করেছি, তাতে আমরা এখনও লোকসানে আছি।’