× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নরসিংদীতে বাড়ছে পান চাষ

নরসিংদী সংবাদদাতা

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৫৬ এএম

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:০৬ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বাজারে পানের ব্যাপক চাহিদা এবং পান চাষ লাভজনক হওয়ায় নরসিংদীতে পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের। তাই দিন দিন বাড়তে দেখা যাচ্ছে পানের বরজের সংখ্যা। এরই মধ্যে নরসিংদীতে পান চাষ করে সফলতা পেয়েছেন অনেক কৃষক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার পানের ফলন ভালো হয়েছে। তাছাড়া চাষিরা পানের দামও ভালো পাচ্ছেন।

জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে মনোহরদীতে সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয়। উপজেলার লেবুতলা, খিদিরপুর, কৃষ্ণপুর এই তিনটি ইউনিয়নের সবকয়টি গ্রামেই প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের পানের বরজ আছে।

চালাকচর, অর্জুনচর, দৌলতপুর, বরচাপা ইউনিয়নে কমবেশি পানের চাষ হয়। ওই সব এলাকার মধ্যে আবার পান চাষের জন্যে খিদিরপুর ইউনিয়নের রামপুর গ্রাম অন্যতম। এ গ্রামে কৃষকদের আয়ের প্রধান উৎসই হচ্ছে পান। এখানে প্রায় গ্রামজুড়েই রয়েছে পানের বরজ। যাদের জমি নেই, তারাও অন্যের জমি বন্ধক নিয়ে পান চাষ করছেন। আর এ থেকেই তারা মেটাচ্ছেন পরিবারের যাবতীয় চাহিদা।

মনোহরদীতে উৎপাদিত পান বাণিজ্যিকভাবে স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের প্রায় সব অঞ্চলে মনোহরদীর পানের চাহিদা রয়েছে। অনেকে আবার পান ওষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করছেন। তাই কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন কৃষকরা ঝুঁকছেন পান চাষে।

পান ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের কাছেই প্রিয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াতিদের খাবারের পর একটু পান-সুপারি না দিলে, মনে হয় কী যেন একটা অপূর্ণতা রয়ে গেছে।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর নরসিংদী জেলার শিবপুর, মনোহরদী ও পলাশ- এ তিনটি উপজেলায় পান চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে শুধু মনোহরদী উপজেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে।

মনোহরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, উপজেলায় দুই প্রকার পান চাষ হয়, গয়ালসুর ও লালডিঙ্গি। তবে কিছু মিষ্টি পান ও ছাঁচি পানও চাষ হয়। এখানের মোট চাষের ৮০ ভাগই গয়ালসুর পান, যা সব ক্রেতাদের পছন্দ।

পান চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পান সাধারণত ভাদ্র-আশ্বিন মাসে দো-আঁশ মাটিতে চাষ করতে হয়। ভালোভাবে আগাছা পরিষ্কার করে চাষ দিয়ে প্রতি এক শতক জমিতে ২ কেজি ফসফেট, ১ কেজি চুন ও ২০০ গ্রাম লিজেন্ট মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হয়। পরে দেড় ফুট দূরত্বে সারি বেঁধে মাটি উঁচু করে ১ ফুট দূরত্বে পানের গাছ লাগিয়ে দিতে হয়। প্রতিটি পানের লতা থেকে ১২ থেকে ১৫টি চারা লাগানো যায়।

এরপর বাঁশের শলা, পাটকাঠি, জিআই তার, কাশবন, সুপারি পাতা ও সুতা দিয়ে পানের বরজ বানাতে হয়। জমির চারদিকে পাটশলা বা বাঁশের বেড়া দিতে হয়, উপরে জিআই তার ও কাশবন দিয়ে বানানো হয় চালা। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পানের বরজে খরচ হয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা।

মাটি থেকে পানের লতা যখন ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি লম্বা হয়, তখন পাশে একটি ৫ থেকে ৬ ফুট লম্বা বাঁশ বা পাটকাঠি পুঁতে দেওয়া হয়। এরপর পানের লতাটি ধীরে ধীরে বড় হয় এবং কাঠি বেয়ে ওপরে উঠতে থাকে। ৫ থেকে ৬ মাস পর থেকে পান বিক্রির উপযোগী হয়। প্রতি ৮ থেকে ১০ দিন পরপর পান বিক্রির জন্যে বাজারে নেওয়া যায়। একটি পানের বরজ থেকে সর্বনিম্ন ১৫ বছর একাধারে পান পাওয়া যায়।

পান চাষী শীতল পাল জানান, পানের বরজে এক প্রকার ফাপপচা রোগ দেখা দেয়। এ থেকে বাঁচাতে পারলে একটি বরজ ২০ থেকে ২৫ বছর থাকে। সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবন মাসে এ রোগটি বেশি দেখা যায়। এটি পানের সবচেয়ে বড় রোগ। তবে এ রোগ দমনে ফোরি, এডমা ও কাফডার নামে তিনটি ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

এ ছাড়াও শীত মৌসুমে এক প্রকার বিষাক্ত কুয়াশা পান গাছে লাগলে পান পাতা ঝরে পড়ে যায়। এতে চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা প্রতিরোধে কোন ওষুধ না থাকায় মাঝে মধ্যে বিপাকে পড়তে হয় চাষিদের। অনেক চাষি কুয়াশা ঠেকানোর জন্য বরজের চারপাশ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়।

রামপুর গ্রামের পান চাষি জহর বণিক জানান, 'আমার দুই বিঘার ওপর একটা পানের বরজ আছে, এর বয়স প্রায় ১০ বছর হবে। পান চাষ করেই আমার সংসার চলে। এই পর্যন্ত পানের ভালো ফলন পেয়েছি, দামও ভালো পেয়েছি। পান চাষ করে আমি স্বাবলম্বী।'

একই এলাকার চান মিয়া বলেন, বর্তমানে প্রতি বিড়া পান আকারভেদে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করতে পারছি। বাজারে এ অঞ্চলের পানের চাহিদা থাকায় পুরাতন পানের যে দাম পেয়েছিলাম, এখন নতুন পানেরও দাম তেমন পাচ্ছি। হাটে পান বিক্রি করে ভালো আয় করতে পারছি। এ দিয়ে আমার সংসার চলছে।

অপর চাষী সুরুজ মিয়া বলেন, পান চাষ করেই আমাদের সংসার চলে। আমি এবং আমার পরিবার দুজনেই বরজে কাজ করি। ১২ বছর ধরে পানের বরজ করে আসছি। বর্তমানে ২০ শতক জমিতে পানের বরজ আছে। প্রতি সপ্তাহে বুধবার হাটে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার পান বিক্রি করি। এখান থেকেই আয় করে সংসারের খরচসহ সন্তানদের লেখাপড়া করানো হয়। বর্তমানে গ্রাম ও শহরে অতিথি আপ্যায়নে এ পানের চাহিদা রয়েছে।

বিভিন্ন স্থান থেকে রামপুর গ্রামে পান কিনতে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার উৎপাদিত পান অনেক পুরু ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই ক্রেতাদেরও পছন্দ, আমারও সহজে বিক্রি করতে পারছি।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. ছাইদুর রহমান বলেন, শুধু মনোহরদী উপজেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। এতে হেক্টর প্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ মেট্রিকটন। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন মনোহরদীতে পান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উৎপাদিত পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও সরবরাহ করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা