× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উদাসীনতায় হারিয়ে যাচ্ছে ১৮ শতকের মুন্সিবাড়ি

চন্দন কুমার সরকার, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৫ ১০:০০ এএম

মোঘল ও ব্রিটিশ স্থাপত্যরীতির অপূর্ব  সংমিশ্রণে নির্মিত কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহাসিক মুন্সিবাড়ি

মোঘল ও ব্রিটিশ স্থাপত্যরীতির অপূর্ব সংমিশ্রণে নির্মিত কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহাসিক মুন্সিবাড়ি

ঐতিহ্য, ইতিহাস আর স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই ছড়িয়ে আছে নানা প্রাচীন স্থাপনা। তেমনি একটি অনন্য নিদর্শন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহাসিক মুন্সিবাড়ি। মোগল ও ব্রিটিশ স্থাপত্যরীতির অপূর্ব সংমিশ্রণে নির্মিত এ প্রাসাদতুল্য ভবনটি যেন কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক জীবন্ত চিত্রকর্ম। কারুকার্যমণ্ডিত দেয়াল, দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য ও বিশাল আয়তনের এই অট্টালিকা একসময় জমিদারদের রাজকীয় জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি বহন করত। ১৮ শতকে নির্মিত এ ভবনটি শুধু স্থাপত্যই নয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক মূল্যবান সাক্ষী। তবে অবহেলা আর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনটির সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। স্থানীয়দের দাবি, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর যেন দ্রুত সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে সংরক্ষণ করে এবং এটিকে একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে, যা কুড়িগ্রামের গর্ব হিসেবে নতুন পরিচিতি পাবে।

এলাকাবাসী জানান, উপজেলা সদর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ধরণীবাড়ি ইউনিয়নে জমিদার বিনোদ লালের পালিত পুত্র ব্রজেন্দ্র লাল মুন্সির হাতে গড়া ৩৯ একর জমির এই রাজপ্রাসাদ একসময় ছিল স্থানীয়দের গর্ব। কারুকার্যখচিত দেয়াল, নাটমন্দির, দুর্গা মন্দির, শিব মন্দির, সূর্য পুকুর এবং বাথরুমের ভেতরে কূপসহ বহু স্থাপনা নিয়ে সমৃদ্ধ এই ভবন এখন পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। জনশ্রুতি রয়েছে, কাশিমবাজার এস্টেটের সপ্তম জমিদার কৃষ্ণনাথ নন্দী একটি খুনের মামলায় আদালতে দাঁড়ানোকে অসম্মানজনক মনে করে ১৮৪৪ সালে নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী মহারাণী স্বর্ণময়ী জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন তার হিসাবরক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন বিনোদ লাল মুন্সি। মহারানীর অনুমতি নিয়ে তিনি এ স্থানে শিল্পনৈপুণ্যে ভরপুর মুন্সিবাড়িটি নির্মাণ করেন।

বাড়িটির প্রথম তলায় রয়েছে তিনটি কক্ষ। একসময় একটি কক্ষে ব্রজেন্দ্র লাল মুন্সির প্রতিকৃতি ছিল, যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নষ্ট করে দেয়। নিঃসন্তান ব্রজেন্দ্র লাল মুন্সি ১৯৬০ সালে মারা যান। পরে তার স্ত্রী আশালতা মুন্সি বিহারী লাল নামে এক ছেলেকে দত্তক নেন। আশালতা মুন্সিও ১৯৭১ সালে মারা গেলে তাদের বংশধরেরা কলকাতা চলে যান। দীর্ঘদিন মামলা-মোকদ্দমা ও মালিকানা পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে।

সরেজমিন দেখা যায়, অট্টালিকা ছাড়াও এখানে রয়েছে কয়েকটি ছোট মন্দির, একটি উন্মুক্ত মঞ্চ, তুলসী তলা, মন্দিরের উত্তর-পশ্চিমে স্নানের স্থান, বাথরুমের ভেতরে একটি কূপ, বাড়ির সামনে বিশাল সূর্য-পুকুর। সংরক্ষণের অভাবে নাটমন্দির, দুর্গা মন্দির, বিষ্ণু মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, শিব মন্দির, শয়নঘর, ডাইনিং রুম, রান্নাঘর, অঙ্কন রুমসহ বাড়ির অন্যান্য অংশ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় তলার বিশ্রাম কক্ষ ও বাথরুমও ব্যবহারের অনুপযোগী।

স্থানীয় উন্নয়নকর্মী জরীপ উদ্দিন বলেন, ঐতিহ্যবাহী মোগল আমলের নিদর্শন এই মুন্সীবাড়ি। সরকারের উচিত এর সুষ্ঠু রক্ষণাবক্ষেণ করে এটিকে দর্শনীয় স্থানে পরিণত করা।

ধরণীবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এরশাদুল হক জানান, মুন্সিবাড়ি আমাদের ইউনিয়ন তথা উলিপুরের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটিকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, ‘মুন্সিবাড়ি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। ভবনটির যাতে সঠিক রক্ষণাবক্ষেণ হয় সেজন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ডিজি স্যারের কাছে আগামী সপ্তাহে চিঠি পাঠিয়ে দেব।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা