চুয়াডাঙ্গা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৫ ২১:০৯ পিএম
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫ ২১:১৮ পিএম
চুয়াডাঙ্গার জয়রামপুর এলাকায় ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারী গাফফার আলী আকাশকে (২৬) হত্যার অভিযোগে পাঁচ রেলকর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন নিহতের পরিবার। ঘটনাটি শুরুতে ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে প্রচার পেলেও, পরবর্তীতে প্রকাশিত তথ্য এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে রূপ দিয়েছে বলে দাবি করছেন স্বজনরা।
গত ১৯ মে রাজশাহী থেকে খুলনাগামী কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে চুয়াডাঙ্গা থেকে বাড়ি ফেরার পথে জয়রামপুর আখ সেন্টারের পাশে আকাশের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে ঘটনার কয়েকদিন পর একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে ও ফোনালাপের রেকর্ডে উঠে আসে, ট্রেনের বগিতে দায়িত্বে থাকা টিটিই, রেলওয়ে পুলিশ ও এটেনডেন্টরা তাকে টেনে-হেঁচড়ে দরজার কাছে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা জিন্নাত আলী গত ২১ মে চুয়াডাঙ্গা আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেনÑ টিটিই লালন চক্রবর্তী (৪২), রেলওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক পারভেজ (৩৬), কনস্টেবল কাদের (৪০), এটেনডেন্ট মিলন (৩৭) ও সোহাগ মিয়া (৩৬)।
রাজশাহী থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে দায়িত্বে থাকা টিটিইসহ রেলওয়ে পুলিশ ও এটেনডেন্টরা আকাশকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, টিকিট না কেটে উঠা যাত্রীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করছিলেন রেলকর্মীরা। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় আকাশকে বগির দরজায় নিয়ে যাওয়ার পর ধাক্কা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয় তারা। কল রেকর্ডে এক প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী জানিয়েছেন, দুজন পুলিশ সদস্যের সামনেই আকাশকে দরজা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
এ মামলায় ৪ জন প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী স্বাক্ষী প্রদান করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী কপোতাক্ষ ট্রেনের একই বগিতে থাকা একাধিক যাত্রীর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে আকাশ হত্যার বিচারের জন্য আইনের আশ্রয় নিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
নিহতের স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার রাফি বলেন, আমার স্বামী পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। ১১ মাসের সন্তান নিয়ে এখন আমি কী করব? আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।
নিহতের বাবা জিন্নাত আলী বলেন, যখন আমি জানতে পারলাম আমার ছেলেকে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে, তখন মামলা করেছি। মামলা করায় জিআরপি পুলিশ থেকে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কনক কুমার দাস বলেন, মামলাটি প্রথমে ডিবির কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত। এরপর বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআইকে দায়িত্ব দেন বিজ্ঞ আদালত। মামলাটি বর্তমানে ঝিনাইদহ পিবিআই তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।