× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দীর্ঘ ২৩ বছর পর পটুয়াখালীতে জেলা বিএনপির সম্মেলন

এনায়েতুর রহমান, পটুয়াখালী

প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫ ২২:১৭ পিএম

দীর্ঘ ২৩ বছর পর পটুয়াখালীতে জেলা বিএনপির সম্মেলন

দীর্ঘ ২৩ বছর পর আগামি  ২ জুলাই পটুয়াখালীতে জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বহুল প্রতীক্ষিত এই সম্মেলন ঘিরে  জেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বইছে। সম্মেলনকে সফল করতে প্রতিদিনই চলছে পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের সভাসমাবেশ। যাচ্ছেন বিভিন্ন উপজেলা সদর, শহর বন্দরে। সম্মেলনস্থলে চলছে সাজসজ্জা প্রস্তুতির ব্যস্ততা। জেলা শহরে দৃষ্টিনন্দন তোরণ, আলোকসজ্জাসহ সারা জেলায় নেতাদের পোস্টার, ব্যানার সাঁটানো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যসহ নানামুখি প্রচার-প্রচারণায় তৃনমূল পর্যায়ে নেতা, কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে।  

গত ২৪ জুন  বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে  আগামী ২ জুলাই   পটুয়াখালীতে জেলা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ২ জুলাই সকাল ১০ টায় পটুয়াখালীর শেরেবাংলা সড়কের জিমনেসিয়ামে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সম্মেলনের বিষয়ে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করার  জন্য জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রশিদ চুন্নু মিয়া ও সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টির কাছে ওই চিঠি পাঠানো হয়। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি এই চিঠির বিষয়টি সুনিশ্চিত করেছেন এবং এর পরই সম্মেলন আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি শুরু করা হয়। 

দলীয় সূত্র জানায়, জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল। ওই সম্মেলনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে সভাপতি ও  বর্তমান সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টিকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে দুই বার জেলা বিএনপির কমিটি অনুমোদন করা হলেও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই সুদীর্ঘ ২৩ বছর পর এই সম্মেলনকে ঘিরে পটুয়াখালীতে  ব্যাপক প্রস্তুতির কাজ চলছে। সম্মেলন সফল করতে এবং কর্মী সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে জেলা ও উপজেলা সদরগুলোয় প্রতিদিনই চলছে মিছিল।  আবার জেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক-সাংগঠনিক সম্পাদক কে কে হচ্ছেন এনিয়েও চলছে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও নানা বিশ্লেষণ। 

এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসারে, আগামী ২ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে জেলার ৮ উপজেলা, ৫ পৌর ও আহ্বায়ক ইউনিটসহ মোট ১৪টি ইউনিটের প্রায় দেড় হাজার কাউন্সিলর গোপন ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। এতে কাউন্সিলরদের গুরুত্ব বেড়েছে।

সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া। প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বিশেষ অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহাবুল হক নান্নু , কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষন বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, সদস্য হাসান মামুনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

পটুয়াখালীতে  দীর্ঘদিন ধরে জেলা বিএনপি কার্যত দুটি পক্ষে বিভক্ত রয়েছে। একটি পক্ষে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও তার অনুসারীরা। অপর পক্ষে রয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব স্নেহাংসু সরকার কুট্টি ও তার দলীয় সমর্থকরা। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ইতিপূর্বে উপজেলা ও পৌর পর্যায়ের সব স্তরের কাউন্সিল সম্পন্ন করে দলকে সংগঠিত করেন। 

এই দুই পক্ষের আগ্রহী অনুসারীরা সম্মেলনকে সামনে রেখে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ডিজিটাল পোস্টার, ব্যানার, ফটোকার্ড, সামাজিক মাধ্যমসহ  নানা কৌশলে প্রচারণা  চালিয়ে যাচ্ছেন। শহর ছাড়িয়ে গ্রামগঞ্জেও এই প্রচার-প্রচারণা ছড়িয়ে পড়েছে। 

জানা গেছে, জেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে সভাপতি পদে সম্ভাব্য প্রর্থীদের তালিকায় রয়েছেন বর্তমান জেলা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া, সদস্য সচিব স্নেহাংসু সরকার কুট্টি এবং সদস্য মাকসুদ আহমেদ বায়েজীদ পান্না। পান্নাকে আলতাফ হোসেন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জিয়া পরিবারের সঙ্গে ৫০ বছেরের রাজনীতিক ও জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খান নান্নু ও  ১/১১ এবং বর্তমান সরকারের পিপি এ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান টোটন, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বশির আহমেদ মৃধা এবং জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আলী খান কবির এর নাম প্রচার প্রচারনায় রয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে মাকসুদ আহমেদ বায়েজীদ পান্না বলেন, এই সম্মেলনে আমি সভাপতি প্রার্থী। সংগ্রামে, আদর্শে আমার যে পরিচিতি ও  সততা রয়েছে তার জন্য এলাকায় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে আমার পরিচিতি রয়েছে। আমার আত্মবিশ্বাস রয়েছে আমি দলের একজন নিবেদিত-পরীক্ষিত  কর্মী। তাই আমি মনে করি যারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার আদর্শ ধারণ করে, আমার বিশ্বাস জেলার ১৪টি ইউনিটের নেতাকর্মীরা যারা কাউন্সিলর, তারা ভোট দিয়ে আমাকে সভাপতি বানাবেন। 

এদিকে সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, ২৪ জুন সম্মেলনের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সম্মেলন আয়োজনের চিঠি পেয়েছি। আমরা সম্মেলনকে সফল করতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছি। সংগঠনের মধ্যে দুইটি পক্ষ ও বিরোধ সম্পর্কের  অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক পরিবার। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, তবে সেটি কোনো বিভাজন নয়। কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  আমি মাঠে থেকে রাজনীতি করেছি। সব আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি। দলকে সুসংগঠিত করেছি।  আমি দলের একজন কর্মী, তাই দলের সবার পাশে দাঁড়ানো আমার দায়িত্ব ছিল। আমি কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো, সেটি নির্ভর করছে  তৃণমূল নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্তের ওপর।

অভিযোগ আছে, বিগত বছরগুলোয় কতিপয় নেতার দ্বিধাবিভক্তি, একগুয়েমি ও ভুল সিদ্ধান্তে দলীয় বিভাজন প্রলম্বিত হয়েছ। এতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দলের যোগ্য কারা তা নেতাকর্মীরা জানেন। তাই সম্মেলনের কাউন্সিলররা গোপন ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করতে চাইছেন। তারা মনে করেন, এর ফলে দল শক্তিশালী হবে। দলে গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ত্যাগী ও প্রকৃত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হবে। 

উলেখ্য, জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল। ওই সম্মেলনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে সভাপতি ও স্নেহাংশু সরকার কুট্টিকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালের ১৪ মে  ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট পটুয়াখালী জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ একটি কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। ওই  কমিটির সভাপতি হন সাবেক  মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক করা হয় এমএ রব মিয়াকে। ওই কমিটি ২০২০ সালের ২ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ৩ নভেম্বর অবদুর রশিদ চুন্নু মিয়াকে আহবায়ক ও স্নেহাংশু সরকার কুট্টিকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায় কমিটি গঠন করা হয়। অনুমোদিত এই  কমিটি ৫ বছর পর্যন্ত আন্দোলন, সংগ্রাম, কাউন্সিলসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে আসছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা