কিশোরগঞ্জ
সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫ ২২:১৪ পিএম
আপডেট : ২৯ জুন ২০২৫ ২২:১৯ পিএম
কিশোরগঞ্জ শহরে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে চোরের উৎপাত। দিনে ও রাতে সুযোগ পেলেই চুরির সুযোগ নিচ্ছে চোর। শোলাকিয়া এলাকার একটি বাড়িতে গত ১৭ দিনে তিনবার চুরি হয়েছে। কয়েকটি ঘটনার বিষয়ে থানায় অভিযোগ ও মামলা করা হলেও চোরেরা আছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
লাগাতার চুরির ঘটনায় স্থানীয়রা আতঙ্কিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, চুরির ঘটনা বাড়লেও প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এটাকে স্থানীয়রা পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা বলেই মনে করছে। এ নিয়ে স্থানীয়রা অনেক হতাশ ।
জুন মাসের ১১ তারিখে প্রথম চুরি হয় শোলাকিয়া এলাকার নীলগঞ্জ রোডের জিয়া উদ্দিনের বাড়িতে। এ সময় তার বাড়ির জানালা খুলে ল্যাপটপ চুরি করে নিয়ে যায়। এই ঘটনার ১০ দিন না যেতেই পুনরায় জুনের ২০ তারিখে ভোর পৌনে ৫টার দিকে বাড়ির গেট ভেঙে প্রয়োজনীয় মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোর। দুটি ঘটনার উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দায়েরের মধ্যেই গত শুক্রবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ওই বাড়িটিতে আবারও চোর ঢুকে পড়ে। এ সময় বাড়ির মালিক জিয়া উদ্দিন মোবাইলে নোটিফিকেশন পেয়ে আশপাশের লোকদের কল করলে যখন তারা আসেন এর আগেই চোর পালিয়ে যায়। তবে এ ঘটনায় এখনও কোনো চোরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
ব্যবসায়িক সূত্রে জিয়া উদ্দিন ঢাকায় অবস্থান করেন বছরের বেশিরভাগ সময়। তার স্ত্রী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চাকরির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া অবস্থান করছেন এবং ছেলে পড়াশোনার কারণে কিশোরগঞ্জের বাইরে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন বলেন, কাজের জন্য বাড়ির বাইরে থাকা হয় পরিবারের সবারই। তাই বাড়ি খালি পেয়ে বারবার চোরেরা চুরি করতে আসে। টানা দুটি চুরির পর এলাকার এক ছেলেকে বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে গুরুদয়াল কলেজের শিক্ষার্থী মাহি বাড়িতে খেতে গেলে ফের বাড়িতে চোর আসে। এ ঘটনার পর আমি কিশোরগঞ্জ এসে সিসি টিভি ফুটেজ দেখে চোরের ছবি নিয়ে খোঁজ করি, অবশেষে চোরকে শনাক্ত করতে পারি।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, চোরকে শনাক্ত করে থানায় দায়েরকৃত অভিযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই সেলিম মোল্লাকে দুপুরে জানালে উনি জানান বিষয়টি দেখবেন। পরবর্তী সময়ে রাত ১১টায় খোঁজ নিলে বলেন, ফাঁড়িতে গাড়ি নেই। একজন নাগরিক হিসেবে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও সেবা না পেয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে আছেন জানিয়ে ভুক্তভোগী জিয়া উদ্দিনের স্ত্রী বিলকিস আরা বেগম বলেন, ‘চুরির ঘটনায় আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছে, কিন্তু এখনও কাউকে আটক করতে পারেনি। একই ঘটনা বারবার ঘটছে কিন্তু কোনো প্রতিকারই হচ্ছে না। আমার মনে হয়, একটি চক্রই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।’
জেলা শহরের স্থানীয় বাসিন্দা ফয়জুল ইসলাম পিংকু বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভয়ে থাকি কখন কার ঘর চুরি হয়ে যায়। তাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো তদারকি নেই বললে চলে। লাগাতার চুরির ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে বলে আনোয়ার হোসেন বলেন, বাড়িতে বউ-বাচ্চাকে একা রাখতেও ভয় লাগছে।
এ বিষয়ে এসআই সেলিম মোল্লা বলেন, চোরকে ধরতে গত শনিবার রাতে তার বাড়িতে অভিযানে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। রবিবার (গতকাল) তাকে ধরতে আবারও অভিযান চালানো হবে।
চোর ধরতে ও চুরি ঠেকাতে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চুরির ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ করছে।