বগুড়া
বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫ ১৯:৫০ পিএম
আপডেট : ২৯ জুন ২০২৫ ২১:৫০ পিএম
বগুড়ার শাজাহানপুরে নিখোঁজের তিন দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হাসিন রাইহান সৌমিকের (৩০) মরদেহ একটি লেক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার (২৯ জুন) সকালে উপজেলার মাঝিরা ক্যান্টনমেন্টের বোট ক্লাবের লেকে মরদেহটি ভেসে উঠলে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।
সৌমিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স শেষ করে ফুল স্কলারশিপে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২৬ জুন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে যাওয়ার কথা ছিল তার, তবে কোনো কারণে তা পিছিয়ে যায়। এ নিয়ে মানসিক চাপে ছিলেন বলে জানিয়েছেন পরিচিতজনেরা।
নিহত সৌমিক বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বোচারপুকুর গ্রামের তৌফিকুর রহমানের ছেলে। তিনি মায়ের সঙ্গে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকার কোহিনুর গার্ডেনে থাকতেন। পাশের ফ্ল্যাটেই থাকতেন তার খালা।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাঁটতে বেরিয়ে নিখোঁজ হন সৌমিক। এরপর তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন সকালে সৌমিকের বাবা বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। নিখোঁজের পর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা দিনরাত খোঁজাখুঁজি চালিয়ে যান। একপর্যায়ে রবিবার সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায় লেকটিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নিখোঁজের পরদিন রাতে সৌমিক শেরপুর বাস কাউন্টার থেকে ঢাকাগামী এসআর পরিবহনের একটি বাসে সি-৭ নম্বর সিটে যাত্রা করেন। ভোররাতে কল্যাণপুরে নেমে রিকশায় কোথাও যান তিনি। ২৮ জুন বিকালে ঢাকার বসুন্ধরা কমপ্লেক্স এলাকায় এক বন্ধুর সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয় তার। তখন তিনি বলেন, ‘বাসায় একটু ঝামেলা হয়েছিল, রাগ করে চলে এসেছি।’ পরে আবার বাসে করে বগুড়ায় ফেরেন বলে জানা গেছে।
পরিবারের দাবি, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সৌমিকের চাচা আহসান হাবিব রতন বলেন, ‘সে অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল। সারারাত পড়াশোনা করত, দিনে ঘুমাত, সন্ধ্যায় হাঁটতে বের হতো। তার কোনো শত্রু ছিল না। কয়েক দিন আগে বাসায় এসির পানি পড়া নিয়ে একটু কথাকাটাকাটি হয়েছিল, তবে তা কোনো বড় বিষয় ছিল না। আমরা বিশ্বাস করি, সৌমিককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শোনা যাচ্ছে, সৌমিকের নামে কেউ বাসের টিকিট কেটেছিল। তবে সে সত্যি ঢাকায় গিয়েছিল কি না, পুলিশ তদন্ত করলে বিস্তারিত জানা যাবে।’
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, প্রাথমিকভাবে মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মঞ্জুর বলেন, সৌমিকের মৃত্যুর কারণ জানতে আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে।