শেরপুর
নাঈম ইসলাম, শেরপুর
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫ ১৮:৩৯ পিএম
আপডেট : ২৯ জুন ২০২৫ ১৮:৪২ পিএম
ভুয়া কৃষক বানিয়ে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। ব্যাংকের প্রতিটি অ্যাকাউন্ট নম্বরে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা আসে। কিসের টাকা আসে তা জানেন না হিসাবধারীরা। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুর অগ্রণী ব্যাংকে বানানো কৃষক ও গুদাম সিন্ডিকেটের কজনের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হলে পুলিশ দুজনকে আটক করে।
দিনভর নানা সমালোচনা ও পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য। তবে আটক দুই যুবককে গভীর রাতে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলেছে, প্রকৃত অভিযোগকারীকে পাওয়া যায়নি। তাই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর গুদাম সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ওই দুই যুবক ফুজাইল ও মুছা দীর্ঘদিন ধরে গুদাম সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকার আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে জেলা সদর খাদ্যগুদামে ২ হাজার টন ধান সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা করছে। বোরো সংগ্রহের আগে খাদ্য বিভাগের অ্যাপসে অনেক কৃষক আবেদন করে লটারিতে বিজয়ী হলেও ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং লাভ তেমন না হওয়ায় ও সরকারের কঠিন শর্ত মেনে ধান দেওয়া জটিল বলে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহে ভাটা পড়েছে। বোরো সংগ্রহে ভাটা পড়লে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লটারিতে বিজয়ী যেকোনো কৃষক জাতীয় পরিচয়পত্র ও কৃষি অফিসের প্রত্যয়নপত্র দিয়ে ধান দিতে পারবেন। এই সুযোগে গুদামের সিন্ডিকেট বোরো ধান সংগ্রহে ভুয়া কৃষক দিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলে গুদামে ধান সরবরাহ শুরু করে।
সিন্ডিকেটটি ৭ দিনে একই মহল্লা কসবা নামাপাড়ার ৪০০ লোক দিয়ে চারটি ব্যাংকে ৪০০ অ্যাকাউন্ট খোলে। গত মঙ্গলবার থেকে অন্তত ৮০টি অ্যাকাউন্টে খাদ্যগুদাম থেকে ১ লাখ ৮ হাজার করে টাকা জমা হয়। পরের দিন বুধবার কয়েকটি ব্যাংক হিসাব থেকে সিন্ডিকেট হিসাবধারীভুক্ত অন্তত ৪০ জন টাকা তুলে নেয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী।
ফুজাইল ও মুছা ছাড়াও গুদামের একটি বড় সিন্ডিকেট ভুয়া কৃষক বানিয়ে সুকৌশলে লভ্যাংশ হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে বিষয়টি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কানে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি গুদামে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন বলে জানা যায়।
জানা যায়, টাকা তোলার সঙ্গে সঙ্গে সিন্ডিকেট হিসাবধারী প্রত্যেককে ২ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা সিন্ডিকেটের লোকজন নিয়ে নেয়। বৃহস্পতিবার একই প্রক্রিয়ায় টাকা তুলে ওই দুই যুবক নিতে চাইলে বাধে বিপত্তি। ব্যাংকের মধ্যে গণ্ডগোল শুরু হলে পুলিশ, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ ঘটনাস্থলে এসে পড়ে। অ্যাকাউন্টধারীদের দাবি, তারা জানেই না কেন তাদের নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তবে এই টাকা তাদের সার-বীজ কেনার জন্য সরকার দিচ্ছে বলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা জানিয়েছিল। তবে এ টাকা কেউ কেউ ব্যাংকঋণ মনে করে আর নেননি। এ নিয়ে পুলিশ গুদাম সিন্ডিকেটের দুজন এবং ভুক্তভোগী কয়েকজন মহিলা হিসাবধারীকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
শেরপুর সদরের অতিরিক্ত সুপার আব্দুল করিম ও সদর থানার ওসি জুবাদুল ইসলাম ব্যাংক ও গুদামে গিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। কসবা নামাপাড়ার ব্যাংক হিসাবধারী শিল্পী আক্তার বলেছেন, ‘আমাদের এলাকার খাদ্যগুদাম ব্যবসায়ী আনসার হাজীর ছেলে ময়না এলাকা থেকে অনেকের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলেছেন এবং বলেছেন, সরকার থেকে সার বীজ দেবে। আমরা প্রকৃত কোনো কৃষক নই। ব্যাংকে হিসাব খোলার দুদিন পরে জানতে পারি আমাদের সবার অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা এসেছে। এটা কিসের টাকা আমরা জানি না।’
শেরপুর খাদ্যগুদামের সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা (এসএমও) সোহেল রানা বলেন, ‘নিয়ম মেনেই ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে।’ শেরপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘এক এলাকায় এত সংখ্যক কৃষকের নামে ব্যাংক হিসাব হয়ে থাকলে বিষয়টি সন্দেহজনক।’ শেরপুর সদর থানার ওসি জুবায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো অভিযোগকারী পাওয়া যায়নি। তাই মধ্যরাতে আটক ওই দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’