শ্বশুর বনাম জামাই হাডুডু খেলা
সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫ ২০:০৯ পিএম
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫ ২০:২০ পিএম
একসময় গ্রাম-বাংলার প্রতিটি প্রান্তে মুখরিত হতো হাডুডুর কসরতে। জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েও সময়ের ব্যবধানে হারাতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি। তবে এখনও কোথাও যদি আয়োজিত হয়, সেখানে জনস্রোত যেন প্রমাণ দেয়Ñ হাডুডুর আবেদন আজও ম্লান হয়নি।
তেমনি এক আয়োজন হয়ে গেল কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের মজিতপুর গ্রামে। হাজারো মানুষের উৎসাহ আর উল্লাসে অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমধর্মী ‘শ্বশুর বনাম জামাই’ হাডুডু খেলা। কেবল একটি খেলার আয়োজন নয়, এটি যেন হয়ে উঠেছিল গ্রামীণ ঐতিহ্য, পারিবারিক বন্ধন আর মিলনমেলার এক অনন্য বার্তা।
শুক্রবার (২৭ জুন) বিকালে এগারসিন্দুর ইউনিয়নের মজিতপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমধর্মী হাডুডু ম্যাচÑ ‘শ্বশুর বনাম জামাই’। এলাকাবাসীর আয়োজিত এই খেলা দেখতে হাজারো মানুষের ঢল নামে মাঠে। মজিতপুর গ্রামের মাঠ যেন পরিণত হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশে। দুই দলের হাডুডু খেলোয়াড়দের শারীরিক কসরত আর দর্শকদের হাততালি, স্লোগান ও উল্লাসে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। দীর্ঘদিন পর ঐতিহ্যবাহী এই খেলা আবারও প্রাণ ফিরে পায় স্থানীয়দের মাঝে।
হাডুডু ম্যাচে শ্বশুর পক্ষ ২-১ পয়েন্টে জয়ী হয় জামাই পক্ষের বিপক্ষে। খেলা শেষে বিজয়ী দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
খেলায় অংশ নেওয়া আব্দুল কাদির বলেন, আর কিছুদিন পরে নতুন প্রজন্ম হাডুডু খেলা কীÑ সেটাই জানবে না। তাই জাতীয় এই খেলাটিকে টিকিয়ে রাখতে এতে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা জামাইদের দুই পয়েন্টে হারিয়ে খুবই আনন্দিত।
এই আয়োজন দেখতে দূরদূরান্ত থেকেও ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। শিক্ষার্থী তায়েফ হোসেন বলেন, আমরা ছোটবেলায় বইয়ে হাডুডু সম্পর্কে পড়েছি। কিন্তু আজ বাস্তবে দেখে দারুণ লাগলো। নিয়মিত এই খেলার আয়োজন হোক, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
ফারুক মিয়া নামের এক দর্শক বলেন, আগে জাতীয় পর্যায়েও হাডুডু খেলা হতো। কিন্তু এখন প্রযুক্তির আধিপত্যে ঘরে ঘরে কম্পিউটার-মোবাইল ফোনের ব্যবহারে এই খেলা হারিয়ে যাচ্ছে। এমন আয়োজনের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল মিয়া জানান, শুধু খেলা নয়, এই আয়োজন গ্রামীণ ঐতিহ্য ও পারিবারিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বৃহৎ আকারে প্রতি বছর যদি আয়োজন করা যেত, তাহলে এ খেলাটি পুনরায় জনগণের মাঝে ফিরে আসবে।
আয়োজক কমিটির সদস্য সজিব মিয়া বলেন, জনপ্রিয়তার কারণেই হাডুডু জাতীয় খেলা হয়েছিল। তবে এখন এটি অনেকটাই হারিয়ে গেছে। সমাজে সৌহার্দ্য বাড়াতে আমরা চেষ্টা করব প্রতি বছর এ ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করার। এমন আয়োজনে শুধু বিনোদনই নয়, পারিবারিক সম্পর্কেও আসে ভিন্নমাত্রার বন্ধন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেনÑ বুরুদিয়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা আমিনুল ইসলাম, সেক্রেটারি যোবায়ের আহমেদ, এগারসিন্দুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির মুখলেছ উদ্দিন আকন্দ, সেক্রেটারি আব্দুস সামাদ, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সম্পাদক জিয়াউর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবির কিশোরগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি ফকির মাহবুবুল হক, পাকুন্দিয়া উপজেলা খাশা ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি আকরাম হুসেন প্রমুখ।