চারঘাট
শাহিনুর সুজন, চারঘাট (রাজশাহী)
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫ ১৮:৩৩ পিএম
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫ ১৮:৩৯ পিএম
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী হাটে আধুনিক কিচেন মার্কেট নির্মাণের নামে চলছে দীর্ঘ ছয় বছরের ভোগান্তি ও অনিশ্চয়তা। প্রায় ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল তিন বছরের মধ্যে, অথচ আজও তা অসম্পূর্ণ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৮২ জন ব্যবসায়ী, যাদের দোকানঘর ভেঙে দেওয়া হলেও আজও তারা ঘর ফেরত পাননিÑ হারিয়েছেন জীবিকা, পুঁজি এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা। এই প্রকল্প এখন স্থানীয় দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক সুযোগসন্ধানীতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
তিন দশক ধরে মুদি ব্যবসা করে আসা মফিজুল ইসলাম বলেন, দোকান বরাদ্দের আশ্বাসে তৎকালীন বাজার কমিটির সভাপতির হাতে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু আজও কোনো ঘর পাইনি। বরং এখন শুনছি নতুন কমিটি আবার টাকা চাইবে। তার মতো অনেক ব্যবসায়ীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, হারিয়েছেন ব্যবসা, পুঁজি এবং জীবনের স্থিতি।
নন্দনগাছি বাজারের আল মামুন ট্রেডার্সের পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা দোকান ফিরে পাব কি না, তা জানি না। বাজার কমিটির সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা প্রত্যেকের কাছ থেকে এক থেকে দুই হাজার টাকা এবং কাগজপত্র নিয়েছেন। এখন তারা কেউই এলাকায় নেই। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান কামনা করছি।
চাল ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, বছরখানেক আগে মার্কেটের দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ হয়েছে। এরপরও ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। প্রশাসনের বা বাজার কমিটির কারো কাছে গেলেই অপমানজনক আচরণ করা হয়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিষয়টি তদারক করতেন তৎকালীন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম এবং সাধারণ সম্পাদক জুলহাস ইসলাম লিটন। এ ছাড়া স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতারাও সরাসরি পজিশন বরাদ্দ বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন। দোকান বরাদ্দের নামে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে এইসব নেতারা এখন পালাতক।
বর্তমানে বাজার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ নান্টু। তিনি বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়া এক টাকাও নেওয়া হবে না। পূর্ববর্তী অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে নন্দনগাছী হাটে আধুনিক মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ। দুইতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের জন্য ৪২ শতক জমি ফাঁকা করে ব্যবসায়ীদের দোকান উচ্ছেদ করা হয়। কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল মিম ডেভেলপার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সয়েল টেস্ট, নকশা জটিলতা এবং করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা বারবার পিছিয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা এসে ঘর বরাদ্দ নিয়ে জানতে চান। কিন্তু তাদের আমি কিছুই বলতে পারি না, খুবই খারাপ লাগে। উপজেলার সবচেয়ে বেশি রাজস্ব দেওয়া এই হাটের ব্যবসায়ীরাই এখন সবচেয়ে অসহায়।
কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিম ডেভেলপার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রতিনিধি সরওয়ারুল ইসলাম জানান, শুরুতে কিছু সমস্যার মুখে পড়লেও বর্তমানে কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী রতন কুমার বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর কাজের গতি বাড়িয়েছি। অল্প সময়ের মধ্যেই দোকান হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।’