বাউফল
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫ ১৮:৩০ পিএম
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫ ১৮:৪১ পিএম
বর্ষা মানেই নতুন পানির আনাগোনা। আর নতুন পানির সঙ্গে আসে দেশি প্রজাতির মাছের ভান্ডার। তাই উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মাছ ধরার উৎসবও যেন জমে ওঠে এই সময়। মাছ ধরার অন্যতম জনপ্রিয় উপকরণ ‘চাঁই’; যা বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি এক ধরনের ফাঁদ।
পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়া বাজারে বর্ষা মৌসুমে চাঁই বিক্রির ধুম পড়ে যায়। প্রাচীন এই হাটে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা চাঁই নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। যদিও মাছ ধরার এই পদ্ধতি নিয়ে পরিবেশবিদদের উদ্বেগও রয়েছে। তারপরও চাঁইয়ের বেচাকেনায় জমে উঠেছে বাউফলের চাঁইয়ের হাট।
পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়া বন্দরের প্রাচীন চাঁইয়ের হাটে বরিশালের পিরোজপুর, খুলনাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ী ও কারিগররা নৌপথে চাঁই বিক্রি করতে আসেন। সারি সারি চাঁই নিয়ে তারা বসেন হাটে, আর উপকূলীয় চরাঞ্চলের জেলেরা এসব চাঁই কিনে মাছ ধরার প্রস্তুতি নেন।
পিরোজপুর থেকে আসা বিক্রেতা মো. রুহুল আকন বলেন, আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে কালাইয়া বাজারে চাঁই বিক্রি করছি। প্রতিটি চাঁই বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। বর্ষা মৌসুমই আমাদের মূল ব্যবসার সময়।
আরেক বিক্রেতা রহিম জোমাদ্দার জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে উচ্চমূল্যে বাঁশ কিনে বাড়িতে বসে শ্রমিক দিয়ে চাঁই তৈরি করি। এখন একটি মাঝারি সাইজের বাঁশ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। একটি বাঁশ দিয়ে ৩০টি চাঁই তৈরি হয়। প্রতিটি চাঁইয়ের শ্রমিক মজুরি ১০০ টাকা করে দিতে হয়। তার ওপর পরিবহন খরচ আছে— সব মিলিয়ে লাভ খুব সীমিত।
চরকালাইয়া গ্রামের জেলে মো. অলি উল্লাহ বলেন, আমি নদীতে জাল দিয়ে সারা বছর মাছ ধরি। কিন্তু বর্ষায় বিল, খাল, চরাঞ্চলে চাঁই পেতে মাছ ধরি। এজন্যই মৌসুমের শুরুতে ৫০টি চাঁই কিনেছি। এবারও পুরো বর্ষায় এই চাঁই মাছ শিকার করব।
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরমিয়াজান গ্রামের সোহরাব মিয়া বলেন, বর্ষায় এই চাঁই দিয়ে দেশিও প্রজাতির ট্যাংরা, পুঁটি, খইলাশা, পাবদা, ভেদি মাছ ধরে আমি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা আয় করি।
তবে পরিবেশবিদরা এ ধরনের মাছ ধরার ফাঁদের বিরোধিতা করছেন। পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘সেইভ দ্য বার্ড অ্যান্ড বি’-এর পরিচালক এমএ বাশার বলেন, এই চাঁই শুধু বড় মাছ নয়, মাছের পোনাও আটকে ফেলে। ফলে দেশি প্রজাতির মাছ ধ্বংস হচ্ছে। আমি এটিকে পরিবেশবান্ধব বলি না, বরং পরিবেশবিরোধী ফাঁদ বলি। এমন চাঁই নিষিদ্ধ করা উচিত।
এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, এই ধরনের চাঁইয়ের বিষয়ে আমাদের কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা নাই। তবে চাঁইগুলো বন্ধের বিষয়ে উপরস্থ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে।