ঈশ্বরগঞ্জ-আঠারবাড়ী সড়ক
আব্দুল মালেক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫ ১৮:২৯ পিএম
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫ ১৮:৪০ পিএম
১৫ কিলোমিটার সড়কে ব্যয় ধরা হয় ১১৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। প্রায় ৫ বছর আগে সড়কটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় পড়ে সড়কের সুফল ঝুলে আছে ৩ কিলোমিটারে। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ-আঠারবাড়ী সড়কের পৌর এলাকা অংশের ওই ৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার না হওয়ায় পুরো সড়কে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। প্রায় প্রতিদিনই খানাখন্দ যানবাহনের বিপদ ডেকে আনছে। উল্টে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ঘটনা নিয়ে এলাকার লোকজন জমি অধিগ্রহণ জটিলতা নিরসন করে দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
জানা যায়, আঠারবাড়ী থেকে ঈশ্বরগঞ্জ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু হয় কয়েক বছর। ১১৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার সড়কের কাজ আটকে আছে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকায় ৩ কিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায়। পৌর এলাকায় সড়কের দুই পাশের স্থাপনার মালিকদের কেউ অধিগ্রহণের টাকা ছাড়া জমি ছাড়তে রাজি নন। ব্যক্তিমালিকানাধীন স্থাপনা ছাড়াও এই জায়গার মধ্যে সরকারি স্থাপনাও রয়েছে।
সড়কের কাজ বন্ধ থাকায় ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী নিয়ে যাতায়াতেও পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। এদিকে অধিগ্রহণ জটিলতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে না পেরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কাছে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছে। সড়ক বিভাগ আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিয়েই কাজ করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ ছাড়া পৌর এলাকা ছাড়াও উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের কিছু অংশেও কাজ শেষ না হওয়ায় স্থানীয়দের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ইজিবাইক চালক রাসেল মিয়া, সুজন ও রবি মিয়া ও খালেক জানান, খানাখন্দে ভরা সড়কে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সময় ইজিবাইক লাফালাফি করে। অনেক সময় ইজিবাইক উল্টেও যা। তাছাড়া অনেক জায়গায় অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখায় রডের অংশ বের হয়ে আছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ সড়ক দিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। একজন রোগীর অভিভাবক রাহেলা বেগম জানান, তিনি তার ভাইয়ের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই ভাঙা সড়কে পৌঁছতেই ইজিবাইকের ঝাঁকুনিতে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
১৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজের ঈশ্বরগঞ্জ অংশের ৩ কিলোমিটার সড়কের কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ঝুলে রয়েছে সড়কের কাজ। প্রতিনিয়ত পথযাত্রী দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে।
গত বুধবার সকালে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তার অসম্পূর্ণ কাজ বাস্তবায়ন করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। এ সময় স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দিয়ে বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। শুধু তাই নয়, ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। এ সড়কটিও দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশা নিয়ে পড়ে আছে। নিরাপদ সড়ক চাই ঈশ্বরগঞ্জ শাখার সভাপতি নূর হোসাইন কাঞ্চন বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সড়কের কাজ শেষ করা না হলে প্রয়োজনে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব।
উল্লেখ্য, আঠারবাড়ী থেকে ঈশ্বরগঞ্জ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ২০২০ সালের মার্চে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ১১৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ ২০২২ সালের জুনে সম্পন্ন করার কথা ছিল। সড়কটির অন্য অংশে কাজ শেষ হলেও ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা অংশে অন্তত ৩ কিলোমিটারজুড়ে কাজ করা যাচ্ছে না। অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে জমি ছাড়তে না চাওয়ায় আটকে আছে নির্মাণকাজ। সড়কটির কাজ শেষ না হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি।
কিশোরগঞ্জ সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুস ছালাম বলেন, ‘সড়কটির দুই পাশের ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা নিরসনের জন্য এ মাসের ৮ তারিখে ১১৪ কোটি টাকার প্রাক্কলন পাস হয়েছে। এখন জমি অধিগ্রহণ জটিলতা নিরসনের জন্য নোটিস করা হবে। এতে দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।’ ঈশ্বরগঞ্জ ইউএনও সানজিদা রহমান বলেন, ‘জমি সংক্রান্ত জটিলতার সমাধানে দ্রুত কাজ হচ্ছে। ভূমি বরাদ্দ টাকা দিয়ে দিলে। আশা করা যায়, দ্রুত এ সমস্যার সুরাহা হবে।’