রামগতি-কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫ ০৯:২১ এএম
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫ ০৯:২২ এএম
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ছেলে সন্তান না থাকায় শেষ বয়সে এসে বিপাকে পড়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিটিসিএল কর্মকর্তা মো: আবুল হোসেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, সম্পত্তির লোভে প্রতিনিয়ত ভাই-ভাতিজাদের অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন তিনি। নিজ বাড়ির ফল-ফলাদি, গাছ ও পুকুরের মাছ জোরপূর্বক নিয়ে যাচ্ছেন তারা। অবস্থা এমন বেগতিক পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে নিজের কেনা সম্পত্তিও ভোগ করতে পারছেন না।
অভিযোগ উঠেছে, শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে আবুল হোসেনের কেনা জমিতে করা দোকানঘর জোরপূর্বক দখল করেন তার ভাই ও ভাতিজারা। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তাদেরকে দখল কাজে থেকে বিরত রাখে।
ঘটনাটি রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বান্দেরহাট বাজার সংলগ্ন আবুল হোসেনের বাড়িতে। তিনি ওই এলাকার মৃত শাহ আলমের ছেলে। অভিযুক্তরা হলেন আবুল কাশেম, আবুল কালাম, সিদ্দিকুল্লা, হেলাল, মনোয়ার হোসেন ও জান্নাত বেগমহ পরিবারের সদস্যরা। তারা ভুক্তভোগীর সহোদর ভাই ও বোন।
জানা যায়, ভুক্তভোগী আবুল হোসেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডে (বিটিসিএল) চাকরি করতেন। ২০১৭ সালে অবসরে যান তিনি। আবুল হোসেনেরা ১৩ ভাই ও চার বোন। চাকরি জীবনে তিনি তার ভাই-বোনদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। আবুল হোসেনের চার মেয়ে রয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়ে দেওয়ায় এবং ছোট মেয়ে পড়ালেখার জন্য ঢাকায় থাকায় স্ত্রীসহ তিনি বাড়িতে একাই থাকেন।
আবুল হোসেনের ভাষ্য, তার ছেলে সন্তান না থাকায় তার সম্পত্তির উপর ভাইদের নজর পড়েছে। মেয়েরাও বাড়িতে না থাকার সুযোগে তার ওপর শারীরিক ও মানসিকসহ নানা ভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানাা যায়, আবুল হোসেন ১৯৯২ সালে স্থানীয় চারজন এবং তার বাবাসহ মোট পাঁচজন থেকে ৭৪ শতাংশ জমি কেনেন এবং ১৯৯৪ সালে সেখানে বাড়ি করেন। ২০১৭ সালে চারটি দোকানঘর নির্মাণ করেন।
আবুল হোসেন জানান, ছেলে সন্তান না থাকায় ২০২১ সালে তিনি তার চার মেয়েকে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ওই জমি লিখে দেন। এরপর থেকেই তার ওপর তার ভাই ও ভাতিজারা নানাভাবে অত্যাচার শুরু করেন।
জানা যায়, অভিযুক্ত ভাইয়েরা ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভূমি অফিস স্থানীয় ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে (তহশিলদার) তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেন।
চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্ত করে উপজেলা ভূমি অফিসে আবুল হোসেনের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এখন মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই শুক্রবার সকালে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অভিযুক্তরা বেড়া দিয়ে জোরপূর্বক দোকানঘর দখল করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার কেনা জমিতে বাড়ির দরজায় কয়েকটি দোকান নির্মাণ করি। আমার তিন মেয়ে বিয়ে দিয়ে আমি বাড়িতে একাই থাকি। আমার ভাই-ভাতিজারা আমার কোন ছেলে সন্তান না থাকার সুযোগ নিয়ে তারা এই জায়গা দখলের পাঁয়তারা করছে। আবুল কাশেম, কালাম, সিদ্দিকুল্লা, হেলাল, জান্নাতসহ তারা সংঘবদ্ধভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জায়গাটি দখলে নিয়ে নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পৈতৃক সম্পত্তি সব ভাই-বোন তাদের প্রাপ্য বুঝে নিয়েছে। এখন আমার কেনা সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করতে চায়।’
এ বিষয়ে তিনি থানায় জানানোর পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আবুল কাশেমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কবির হোসেন বলেন, জায়গা দখলের একটি অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।