× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মৌলভীবাজার

শতবর্ষী কালারবাজারে বছরে বিক্রি তিন কোটি টাকার বাঁশ

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫ ১৬:৫০ পিএম

শতবর্ষী কালারবাজারে বছরে বিক্রি তিন কোটি টাকার বাঁশ

খরস্রোতা কুশিয়ারা আর বিস্তৃত কাউয়া দিঘি হাওরের মাঝে শতবর্ষের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের প্রাচীন গ্রামীণ হাট কালারবাজার। স্থানীয়ভাবে নলুয়ারমুখ বাজার নামেও পরিচিত এটি। যদিও এই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের কেনাবেচা চলে, তবে এটি সর্বাধিক খ্যাতি পেয়েছে ‘বাঁশের হাট’ হিসেবে। সপ্তাহে শুক্র ও সোমবার বসে এ হাট। ওই দুদিনেই বিক্রি হয় লাখ লাখ টাকার বাঁশ।

ঐতিহ্যবাহী এই বাজার শুধু মৌলভীবাজার নয়, সিলেট বিভাগের অন্যতম বৃহৎ এবং প্রাচীন বাঁশের হাট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মৌলভীবাজার ছাড়াও সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা হাটে আসেন। শতবর্ষ আগে নদীপথে গড়ে ওঠা এ বাজার এখন সড়কপথে সারা দেশে বাঁশ সরবরাহ করে আসছে। কালারবাজার আজ শুধু একটি হাট নয়, এটি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রাণ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও ধারক।

সম্প্রতি কালারবাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ নানা পণ্যের সমাহার থাকলেও বাজারের প্রধান আকর্ষণ ‘বাঁশ’। চাঁদনীঘাট-হলদিগুল সড়কের উত্তর পাশে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বাজারটির বৃহদাংশজুড়ে বিভিন্ন সাইজের বাঁশ থরে-থরে মাটিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ক্রেতারা আসছেন, পছন্দনীয় বাঁশ দরদাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

বাজারের বাঁশ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন জানান, উনিশশ পনেরো অথবা বিশ সালের দিকে কুশিয়ারা নদী ও কাউয়া দিঘি হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের কেন্দ্র করে কালারবাজার নামে ছোট্ট আকারে গড়ে ওঠেছিল একটি গ্রামীণ বাজার। ওই সময়ে সপ্তাহে দুদিন সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৯টা-১০টা অবধি কুপি বাতির আলোতে চলত বাজারের কার্যক্রম। বাজার প্রতিষ্ঠার সময়কাল থেকেই বাজারের একাংশে গড়ে তোলা হয় ‘বাঁশের হাট’। সে সময় এলাকার মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল পানিপথ। তৎকালীন সময়ে সিলেট জেলার বালাগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ ও আজমিরিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন কালারবাজারে এসে বাঁশ কিনে নৌকা ও লঞ্চযোগে নিয়ে যেতেন নিজ নিজ গন্তব্যে। ধীরে ধীরে বাজারের পরিধি যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি বাড়তে থাকে বাঁশের হাটের পরিধিও। বর্তমানে হাওরের বুক চিরে হয়েছে পাকা সড়ক। এখন কালারবাজার থেকে বাঁশ কিনে বিভিন্ন যানবাহনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়া যায়। বাজারে এখন ৫০ জনের মতো বাঁশ ব্যবসায়ী থাকলেও নিয়মিত বাঁশের ব্যবসা করছেন প্রায় ৩০ জন ব্যবসায়ী।

কালারবাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী মো. বাছিত মিয়া বলেন, আমি প্রায় ৩৫ বছর ধরে এই হাটে বাঁশের ব্যবসা করছি। আমরা পারিবারিকভাবে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এখানে দেশে উৎপাদিত সব জাতের বাঁশ পাওয়া গেলেও বড়ুয়া বাঁশের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। জেলার সদর, কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ কিনে এ বাজারে এনে ব্যবসা করছি। একটি বড় সাইজের বাঁশ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।

কালারবাজারের ব্যবসায়ী মির্জা মো. তুরন মিয়া বলেন, ‘আমাদের বাজারের বাঁশের সুনাম সিলেটজুড়ে। কুশিয়ার এপারে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা আর ওপারে সিলেট জেলার বালাগঞ্জ। বাজারের বাঁশ কুশিয়ারা নদীপথে সিলেট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। দাদা-বাবার কাছে শুনেছি এ বাজারটি গড়ে উঠেছিল একশ বছরেরও আগে। হাটের দিন শুক্রবার জমজমাট হয়ে ওঠে বাঁশের হাটটি। 

ব্যবসায়ী আরিফ আলী, আতাউর রহমান ও মো. ছাবুল আহমদ বলেন, আমাদের বাঁশবাজার শুধু মৌলভীবাজার নয়, পুরো সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও পুরাতন বাজার। এ বাজারে বাঁশ কিনতে আসেন পুরো সিলেট অঞ্চলের মানুষ। 

বাঁশ ব্যবসায়ী মো. কালাম মিয়া জানান, তারা মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত বা কুড়ি হিসেবে বাঁশ কিনে হাটে আনেন। প্রতিটি বাঁশ বিক্রির পর হাটের ইজারাদারকে দিতে হয় ২ টাকা। 

উত্তরভাগ ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বাঁশ-বেত কারিগর মহেন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমি গত ৪০ বছর ধরে এই হাট থেকে বাঁশ কিনে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে বিক্রি করি। এমন বড় ও পুরাতন বাঁশের বাজার সিলেট অঞ্চলে আর আছে কি না, জানা নেই।’

এ হাটের প্রভাব শুধু বাঁশ ব্যবসায় নয়। বাজার সংলগ্ন অন্যান্য দোকান, হোটেল ও পরিবহন ব্যবস্থাতেও পড়ছে। স্থানীয়দের আশা, সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন যদি এই বাজারের উন্নয়নে আরও উদ্যোগ নেয়, তবে এটি হতে পারে দেশের অন্যতম প্রধান বাঁশ সরবরাহ কেন্দ্র।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা