বরিশাল
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫ ১৬:৪৭ পিএম
বরিশালের বিসিক শিল্পনগরীতে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় উৎপাদনে চরম সংকটে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। উৎপাদনের জন্য একমাত্র ভরসা গ্যাস সিলিন্ডার, যা খরচ বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুণে। এতে প্রতিযোগিতা হারাচ্ছেন শিল্প মালিকরা, থমকে গেছে নতুন শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগও।
বিসিক শিল্পনগরীর অন্যতম প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল বিস্কুট লিমিটেডের মাসিক উৎপাদন ৭ কোটি টাকার পণ্য হলেও গ্যাসের অভাবে ব্যয় গুনতে হচ্ছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা, যা প্রাকৃতিক গ্যাসে হলে মাত্র ১০-১৫ লাখ টাকা হতো। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক আবদুর রহমান বলেন, পণ্য উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় এগোতে পারছেন না শিল্পোদ্যোক্তারা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে রয়েছে নানা জটিলতা। গ্যাস না থাকায় উৎপাদন ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি নতুন বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, বরিশাল বিসিকে মোট ৪৭০টি প্লটের রয়েছে। এর মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৭৭টি, তবে চালু আছে মাত্র ১৩৫টি প্রতিষ্ঠান। শুধু বরিশাল নয়, ভোলার বিসিকেও একই অবস্থা। প্রাকৃতিক গ্যাসে কূপ থাকলেও জেলার বিসিককে গ্যাস সংযোগ পৌঁছেছে অল্প কিছুদিন হলো। ৯৩টি প্লটের মধ্যে খুঁড়িয়ে কার্যক্রম চলছে মাত্র ৩৪টি। আর এখন পর্যন্ত কার্যকর সংযোগ পেয়েছে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের অভাব বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
এ ছাড়া ঝালকাঠির বিসিককে ৭৯টি প্লটের মধ্যে ফাঁকা ৫৬টি। বাকি ২৩ প্লটে গড়ে উঠেছে মাত্র ৭টি প্রতিষ্ঠান। পটুয়াখালীর ১০২টি প্লটের মধ্যে কারখানা চালু আছে মাত্র ৪৩টি। সুযোগ সুবিধার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে পটুয়াখালীর শিল্পনগরী।
শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের পর দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এলেও পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বরিশালে কলকারখানা তৈরির সাহস পাচ্ছেন না তারা। পরিস্থিতি উত্তরণে ভোলার গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহের দাবি শিল্পোদ্যোক্তাদের। এর ফলে সম্ভাবনাময় অঞ্চলের অর্থনীতি স্থবির হয়ে আছে। তারা ভোলার গ্যাস বরিশালে আনার দাবিতে সরকারের কাছে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিক আবেদন করেছেন।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক হাফিজুর রহমান হিরা বলেন, বরিশালে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন ও এর বাইরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭ শতাধিক কারখানা রয়েছে। একদিকে পদ্মা সেতু অন্যদিকে পায়রা বন্দর, আছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও। সব মিলিয়ে এখানে শিল্প বিপ্লবের যে সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে তার পুরোপুরি সুফল নিতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের কোনো বিকল্প নেই। দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বরিশালের স্থানীয় অর্থনীতি সেভাবে যাচ্ছে না। শিল্প-কারখানা গড়ায় রয়েছে নানা প্রতিকূলতা। যেগুলোও আছে তা অন্য বিভাগের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে দ্রুত ভোলার গ্যাস বরিশালে আনার দাবি জানাই। তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন আনলেও প্রাকৃতিক গ্যাস না থাকায় এগোচ্ছে না শিল্প-কারখানা। সিলিন্ডার গ্যাস আর বিদ্যুৎ দিয়ে পণ্য উৎপাদনে খরচ বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। বরিশাল বিভাগের ভোলায় আছে প্রাকৃতিক গ্যাস। বিভাগের অন্য জেলাগুলোতে পাইপলাইনের মাধ্যমে সেই গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়ে এরই মধ্যে পরিকল্পনা ও নৌ উপদেষ্টাকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তারা উপদেষ্টা পরিষদের মিটিং অথবা একনেকে বিষয়টি পাস করার আশ্বাস দিয়েছে। আশা করছি যদি ভোলার গ্যাস বরিশালে আসে তবে পুরো চিত্র পাল্টে যাবে।
বরিশাল বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর সুফল পেতে হলে গ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। এর মধ্যে বিসিকে বড় বড় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান প্লট বরাদ্দ নিয়েছে। গ্যাস সংযোগ না থাকায় বিনিয়োগকারীরা কার্যক্রম শুরু করছেন না। ফলে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে না। এরই মধ্যে বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। আশা করছি বরিশালের জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।