প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৫ ২১:৫২ পিএম
আপডেট : ১৯ জুন ২০২৫ ২২:৩৮ পিএম
দেশের দুই সীমান্ত দিয়ে আরও ২৪ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত থেকে ভোর পর্যন্ত খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার তানাক্কাপাড়া সীমান্ত এবং ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার যশপুর সীমান্ত দিয়ে এসব পুশইনের ঘটনা ঘটে।
একই দিনে ভারতে কারাভোগ শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন ১৪ বাংলাদেশি। এ ছাড়া গত বুধবার আন্তর্জাতিক আইন মেনে সাতক্ষীরার কুশখালী সীমান্ত দিয়ে ৬ জন নারী-পুরুষকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ।
খাগড়াছড়িতে নারী-শিশুসহ ১৩ জনকে পুশইন
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার তানাক্কাপাড়া সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ আরও ১৩ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। বৃহস্পতিবার ভোরে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ফাঁক করে তাদের বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বিজিবির তত্ত্বাবধানে বর্তমানে পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা মাটিরাঙ্গার এক বিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন।
স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানান, পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা ভারতের মহারাষ্ট্রে ইটভাটা ও নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কেউ কেউ ২০-২২ বছর আগে, কেউ ৯-১০ বছর আগে কাজের সন্ধানে অবৈধপথে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
এর আগে চার দফায় ১৩২ জনকে একইভাবে বাংলাদেশে পুশইন করে বিএসএফ। এ নিয়ে মোট পুশইনের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪৫ জনে।
জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানিয়েছেন, পূর্বে পুশইন হওয়া ১৩২ জনকে যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশের নাগরিক নিশ্চিত হওয়ায় যার যার পরিবার ও স্থানে পাঠানো হয়েছে। আজকে পুশইন হওয়া ১৩ জনকে যাচাই-বাছাই শেষে যদি তাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিশ্চিত হয়, তবে আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিজ নিজ এলাকায় পাঠানো হবে।
রাতের আঁধারে ১১ বাংলাদেশিকে পুশইন
রাতের আঁধারে ফেনী সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১১ বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে বিএসএফ। বৃহস্পতিবার রাতে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার যশপুর সীমান্ত দিয়ে এই পুশইনের ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে একজন পুরুষ, ৭ জন নারী ও ৩ জন শিশু রয়েছে। আটককৃতরা যশোর, নড়াইল ও সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা।
বিজিবি জানায়, রাত ২টার দিকে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার যশপুর বিওপির মটুয়া ২১৯১ পিলার দিয়ে বৈরী আবহাওয়ার সুযোগে ১১ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করে বিএসএফ। এ সময় তাদেরকে আটক করে বিজিবি।
আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাদের বাড়ি যশোর, নড়াইল ও সাতক্ষীরা জেলায়। তারা বাসাবাড়ির কাজসহ বিভিন্ন কাজের উদ্দেশে চোরাইভাবে দালালের মাধ্যমে বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। আটককৃতদের ছাগলনাইয়া থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
ফেনীস্থ ৪ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন জানান, স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকর্তৃক উদ্ধারকৃত বাংলাদেশি নাগরিকদের বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
ভারতে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরেছেন ১৪ বাংলাদেশি
কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে আটক হওয়া ১৪ বাংলাদেশি নাগরিক কারাভোগ শেষে দেশে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন তারা।
দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশিরা হলেনÑ মো. ইসমাইল, হারুন মজুমদার, পাপিয়া আক্তার, লিজা খানম, লিজা খাতুন, আশামণি, মফিজুল ইসলাম, তাহিয়াতুন নেসা, আঁখি ইসলাম, সঞ্জয় সরকার, স্বপন সরকার, যিশু কান্তি দাস, বিপুল দাস ও সুশেন দাস। তাদের বাড়ি ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, চাঁদপুর, খুলনা, নেত্রকোণা ও সুনামগঞ্জ জেলায়।
ভারতের আগরতলাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহায়তায় এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের মধ্যস্ততায় দেশে ফেরেন তারা। পরে স্থলবন্দরে শূন্যরেখায় এসব বাংলাদেশিদের তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার শায়লা শারমিন জানান, ফেরত আসা বাংলাদেশিদের আর্থিক প্রণোদনা ও জরুরি খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাদেরকে পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে মাইগ্রেশন বিভাগ।
আগরতলাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের কনস্যুলার অ্যাসিস্ট্যান্ট ওমর শরীফ জানান, কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারত গিয়ে আটক হন ১৪ বাংলাদেশি। পরে আদালতের আদেশে কারাভোগ শেষে তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। আগরতলায় ক্ষণস্থায়ী কারাগারে আটক আরও ৩৩ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ সময় স্থলবন্দরের শূন্যরেখায় উপস্থিত ছিলেন, আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিএম রাশেদুল ইসলাম, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, আইসিপি ক্যাম্প কমান্ডার হাবিলদার আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
ছয় নারী-পুরুষকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর
আন্তর্জাতিক আইন মেনে সাতক্ষীরার কুশখালী সীমান্ত দিয়ে ছয়জন নারী-পুরুষকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ। গত বুধবার রাতে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হস্তান্তর করা ব্যক্তিরা হলেনÑ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তোতলা গ্রামের মুন্সি নজরুল হকের ছেলে আবু সাঈদ মুন্সি, রংপুরের মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা নাজিম উদ্দীনের ছেলে ওয়াজ কুরুনী, নারায়ণগঞ্জের কদমতলী গ্রামের মো. মাসুদের স্ত্রী রোকসানা বেগম, যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বাঘআছড়া গ্রামের কোরবান আলীর স্ত্রী সাবরিনা খাতুন, একই উপজেলার সনাতনকাটি গ্রামের ইব্রাহীম সরদারের মেয়ে মোছা. হাফিজা বেগম ও সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের ওমর আলীর স্ত্রী রোকসানা খাতুন। তারা কেউ কৃষিকাজ, কেউ গৃহকর্মীর কাজের জন্য ২ থেকে ৬ বছর আগে সাতক্ষীরার ভোমরা, কুশখালীসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতের বোম্বে গিয়েছিলেন।
সাতক্ষীরার কুশখালী বিজিবির হাবিলদার মেজবাহউদ্দীন জানান, ভারতীয় পুলিশ তাদের বোম্বে এলাকা থেকে আটক করে পশ্চিমবাংলার চব্বিশ পরগনা জেলার তারালি ক্যম্পের বিএসএফ সদস্যদের কাছে দেয়। আন্তর্জাতিক আইন মেনে বিএসএফের তারালি ক্যাম্পের পরিদর্শক বিকাশ রায় তাদেরকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। যেহেতু তারা বাংলাদেশের নাগরিক, তাই তাদেরকে বিজিবি গ্রহণ করে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামিনুল হক জানান, সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা ৬ জন নারী-পুরুষকে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছেনÑ খাগড়াছড়ি, ফেনী , আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) এবং সাতক্ষীরা প্রতিবেদক