কুড়িগ্রাম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫ ১৮:০৯ পিএম
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫ ১৯:৪২ পিএম
প্রবা ফটো
কুড়িগ্রামের বিনোদনপ্রেমী মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন কুড়িগ্রামে একটি বিনোদন পার্ক হোক। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানার উদ্যোগে ইতোমধ্যে ধরলা নদীর পূর্ব প্রান্তে ‘ডিসি পার্ক’ নামে সেই কাঙ্খিত পার্কটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের দপ্তর সূত্র জানায়, পার্কে মিনি চিড়িয়াখানা, রেস্তোরাঁ, বিভিন্ন রাইড, পিকনিক স্পট, শোভা বর্ধনের স্পট, নামাজ ঘর, শিশু কর্নার, ভাওয়াইয়া কর্ণার, কছিমুদ্দিন কর্ণারসহ বিভিন্ন সুবিধা রাখার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফল-ফুলের গাছ লাগিয়ে পরিবেশ বান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন করা এবং পার্কটি ঘিরে মানুষের কর্ম সংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব কমানোর জন্য পার্কের অভ্যন্তরে ও বাহিরে বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনার কথাও বলা হয়েছে। বর্ধিত কলেবরে কুড়িগ্রাম জেলায় এই প্রথম বিনোদন পার্ক নির্মাণে জেলাবাসীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। অনুন্নত ও পিছিয়ে পড়া জেলা কুড়িগ্রামকে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা। তার এমন মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে জেলাবাসী।
অপরদিকে, বিশাল এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞকে বাধাগ্রস্ত করতে নামকরণ নিয়ে একটি মহল অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জেলার সুধিমহল।
কুড়িগ্রাম ধরলা ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে প্রস্তাবিত ডিসি পার্ক কাজের অগ্রগতি দেখতে গিয়ে পার্কের নাম নিয়ে ফেসবুক পোস্টে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে পার্কের কাজ দেখতে আসা পৌর শহরের বাসিন্দা এডভোকেট আসরাফ আলী, পারভেজ আহমেদ দম্পতি, রোকসানা, পারভীন বেগমসহ অনেকে পার্কের নির্মাণকাজ কবে শেষ হবে তাদের আকাঙ্ক্ষার কথা বলতে গিয়ে জানান, কুড়িগ্রামে একটি বিনোদন পার্ক খুবেই প্রয়োজন। আমাদের কাঙ্ক্ষিত পার্ক হচ্ছে দেখে আমরা খুবই খুশি।
উল্লেখ্য, কুড়িগ্রাম জেলা শহরে বিনোদনের কোনো জায়গা নেই। শহরের মানুষজন ধরলা সেতুর দুপ্রান্তের শহর রক্ষা বাঁধে ঘোরাঘুরি করে সময় কাটায়। কুড়িগ্রাম শহরে একটি বিনোদন পার্ক হোক এটা এখানকার মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন। চলতি বছরের ২০ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের একটি মিটিংয়ে জেলার প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের (বিএনপি, জামায়াত, ইসলামি আন্দলন, এনসিপি, এবি পার্টি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া প্রতিনিধি, সুধিজন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকতা সকলের মতামতের ভিত্তিতে কুড়িগ্রাম ধরলা ব্রিজের পূর্বপ্রান্তে 'ডিসি পার্ক' নামে একটি পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা সিদ্ধান্তটি মিটিংয়ে রেজুলেশনের আকারে ধরলা সেতুর পূর্ব প্রান্তে ‘ডিসি পার্ক’ নামকরণে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই প্রেক্ষিতে ধরলা সেতুর পূর্বপ্রান্তে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পাশে সরকারের পড়ে থাকা প্রায় ৩৫ একর পতিত জমিতে পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। গত প্রায় এক মাসের মধ্যে বালু ভরাটসহ কিছু নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসক পার্কের নির্মাণ কাজ নিয়মিত পরিদর্শন ও তদারকি করছেন।
তবে পার্কের নামকরণ নিয়ে উঠেছে নানা দাবি। কেউ বলছেন কুড়িগ্রামে পার্ক হচ্ছে তার নাম ‘কুড়িগ্রাম পার্ক’ হতে হবে, কেউবা বলছেন যেহেতু ধরলা নদী তীরবর্তী স্থানে হচ্ছে তাই পার্কের নাম ‘ধরলা পার্ক’ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আবার অনেকের অভিমত পার্কটির নাম ‘কুড়িগ্রাম ইকো পার্ক’ করা হোক। আবার অনেক সাধারণ মানুষ বলছেন নাম দিয়ে কি হবে। কুড়িগ্রাম উন্নয়নে একটি পার্ক হচ্ছে সেটিই বা কম কিসের। জেলা প্রশাসক পার্কটি করছেন এজন্য অনেকেই জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানান।
কুড়িগ্রাম ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবু দারদা হেলাল বলেন, কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক নামকরণ নিয়ে ফেসবুকে দুয়েকজন অহেতুক জরিপ ও বিতর্কিত পোস্ট বিষয়টি আমার দৃষ্টিতে খুবই অবান্তর মনে হয়েছে। আমার অবস্থান থেকে আমি যতটুকু বুঝি সৃষ্টিশীল ও উন্নয়নশীল যেকোন কাজে আপামর জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা উচিত। এখানে কাজটির গুরুত্ব কতটুকু সেটাই অনুভব করা দরকার। যেকোন কাজের একটা শিরোনাম থাকে, সেটার দিকে নজর না দিয়ে কাজটির গুরুত্বের দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সোহেল হোসাইন কায়কোবাদ ফেসবুকে এক ভিডিও পোস্টে বলেন, ধরলা ব্রিজের পূর্ব পাড়ে ডিসি পার্ক নির্মাণে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের আন্দোলনে আমরা যে সকল রাজনৈতিক দল ছিলাম সকলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে এবং জেলা প্রশাসক মহোদয় সম্মতি দিয়েছেন। আমরা মনে করি, কুড়িগ্রাম জেলায় বিনোদনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই, এজন্য ডিসি পার্ক হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা বুঝতে পারি বিভিন্ন ঈদ পর্বে এবং বিভিন্ন সময় ধরলা ব্রিজ পাড়ে মানুষের যে সমাগমেে ব্যাপক উপস্থিতি এতেই বুঝা যায় যে, কুড়িগ্রামে একটা বিনোদনের জায়গা প্রয়োজন। ডিসি পার্কটা ওখানে হলে বিনোদন ছাড়াও আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ওখানে করতে পারব, পাশে একটা মঞ্চ থাকবে। জেলা প্রশাসক মহোদয়কে পার্কটি দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান জানান। একই সঙ্গে তিনি নামকরণ বিতর্ক নিয়ে বলেন, যারা নামকরণ নিয়ে বিতর্ক করছে তারা নিসন্দেহে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মা।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কই আমি তো তেমন কাউকে দেখছি না কেউ নামকরণ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। তবে কিছু কিছু ফেসবুক যোদ্ধা তাদের ফেসবুক আইডিতে অহেতুক প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। শুধু তাদের উদ্দেশ্যই বলতে চাই, কুড়িগ্রামে যখন শেখ রাসেল পার্ক, কুড়িগ্রাম টাউনহল নাম পরিবর্তন করে শেখ রাসেল হলো করা হয়েছে তখন ওইসব যোদ্ধারা কোথায় ছিল? কুড়িগ্রামের উন্নয়নে তখন কিছুই বলা হয়নি। আমি আশা করছি এখনও কেউ কিছুই বলছে না বলবেও না। মতামত দেয়ার অধিকার সবার আছে, থাকা দরকার তবে কুড়িগ্রামের উন্নয়নে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে চাইলে উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে ডিসি পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছ। এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত কোনো মত নেই। পার্কের নামকরণ নিয়ে ভিন্নমত থাকতেই পারে। আমরা সেগুলোকে স্বাগত জানাই। তবে যতদিন থাকব সরকারি বিধি অনুযায়ী কুড়িগ্রামের উন্নয়নে আপনাদের পাশে আছি সাথেই আছি। আপনারা পাশে থাকলে কোন বাধাই বাধা না। অনুন্নত ও পিছিয়ে পড়া জেলা কুড়িগ্রামকে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে নেওয়াই আমার মূল লক্ষ্য।