ভূঞাপুর
আতিফ রাসেল, (ভূঞাপুর) টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫ ১৭:৩৫ পিএম
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫ ১৭:৪৭ পিএম
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার শিয়ালখোল ব্রিজ থেকে শিয়ালখোল প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাল অবশেষে দখলমুক্ত করে খনন শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। দীর্ঘ ৫০ বছর পর খালটি পুনরুদ্ধার হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বৃষ্টিপাত ও বর্ষা মৌসুমে এ এলাকার দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ত। ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও হাটবাজারে দেখা দিত জলাবদ্ধতা। এ অবস্থার স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয় শিয়ালখোল-পশ্চিম ভূঞাপুর সংযোগ খালটি পুনঃখননের। জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনাতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় বিশিষ্টজনরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, একসময় শিয়ালখোল হাট থেকে পশ্চিম ভূঞাপুর হয়ে খালটি লৌহজং নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। ঐতিহ্যবাহী শিয়ালখোল হাট ছিল সেই সময় একটি ব্যস্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র। যেখানে বড় বড় নৌকা চলাচল করত এই খালের মাধ্যমে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় খালটি ভরাট হয়ে পড়ে। একে একে দখল হয়ে যায় এর দুই পাড়। কোথাও কোথাও বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। এতে খালের অস্তিত্বই পুরোপুরি বিপন্ন হয়ে পড়ে।
দীর্ঘদিনের এই অব্যবস্থাপনার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ তুলেছেন পরিবেশবাদীরা। তাদের দাবি, বিভিন্ন সময় প্রশাসনের অবহেলা ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় খালটি দখল হয়ে যায়। ফলে ভূঞাপুর বাজার, ঘাটান্দি, ফসলান্দি এবং আশপাশের এলাকায় জলজটে আটকা পড়ে এবং তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয় চরম দুর্ভোগ।
সাম্প্রতিক সময়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে খালটি পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ২ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে এই খাল খননকাজের উদ্বোধন করেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ভূঞাপুর উপজেলা ইউএনও আবু আব্দুল্লাহ খান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিকুল ইসলাম এবং ভূঞাপুর থানার ওসি একেএম রেজাউল করিম।
স্থানীয় কৃষক সোনা উল্লা বলেন, ‘বর্ষা এলেই আমাদের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। পানি দীর্ঘদিন থাকায় নোংরা পানিতে জমির মাটি নষ্ট হয়ে পড়ে। এবার আশা করছি ফসল রক্ষা পাবে।’
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলেই বাসা থেকে বের হওয়া যায় না। খাল খননের ফলে এলাকার মানুষ ভীষণভাবে উপকৃত হবে। এতদিন শুধু দুর্ভোগের সঙ্গে আমাদের চলতে হয়েছে। এখন তা আর থাকবে না আশা করা যায়।’
পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় এই খালটি উদ্ধার করা হলো। পর্যায়ক্রমে আমরা সব দখলকৃত খাল উদ্ধার করব।’ এ বিষয়ে উপজেলা ইউএনও আবু আব্দুল্লাহ খান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই খালটি বেদখল ছিল। শহরের বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো। আর খালটি পুনরুদ্ধার করে জনদুর্ভোগ কমাতে আমরা খনন শুরু করেছি। এছাড়া খালের পাশ দিয়ে গাছ লাগানো হবে, যাতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়।’