শফিক সরকার, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫ ১৭:৩১ পিএম
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫ ১৭:৪৯ পিএম
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী গোদারিয়া নদী পাড়ি দিতে দীর্ঘদিন ভোগান্তিতে ছিল দুই পারের অন্তত ২২ গ্রামের প্রায় এক লাখ মানুষ। বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে এত দিন দুর্ভোগ পোহাতে হতো এসব অঞ্চলের মানুষকে। এ সময় নৌকা ছাড়া বিকল্প পথ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতো এলাকাবাসী, বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা।
সেই দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব করতে এবার স্থানীয়দের সহায়তায় এবং এক বিএনপি নেতার উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে ২৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বাঁশের সেতু। গত মঙ্গলবার দুই উপজেলার গোদারিয়া নদীর মিলন বাজার অংশে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
হালুয়াঘাটের বিলডোরা ও ধোবাউড়ার বাঘবেড় ইউনিয়নের মিলন বাজারের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী গোদারিয়া। এই নদীটির দুই পাশে রয়েছে দুটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়। এ ছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নদীর একপাশে হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোরা ইউনিয়নের নিচিন্তপুর, রহেলা, আতুয়াজঙ্গল, বাঘমার, আফানিয়া, পলাশকান্দা, দাঁড়িয়াকান্দা, কানাকুড়িকান্দা, খরমা, বাবুবাজার এবং অন্যপাশে ধোবাউড়া উপজেলার খামারবাসা, চারিয়াকান্দা, ছোট বন, খড়িয়াবাসা, জিগাচিয়া, চন্দিকান্দা, শ্রীপুর, মান্দালিয়া, বাজলিকান্দা, শালকুনা ও বাঘব। এসব গ্রামের অন্তত এক লাখ মানুষ চলাচল করে মিলন বাজারের গোদারিয়া নদী পার হয়ে। শুষ্ক মৌসুমে মানুষের চলাচলের সুবিধা থাকলেও বর্ষা এলেই বাড়ে ভোগান্তি। কৃষিকাজ থেকে শুরু করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য দুই পারে যাতায়াত রয়েছে স্থানীয়দের।
বর্ষাকালে নদী পার হতে পোহাতে হয় ভোগান্তি। কখনও নৌকা আবার কখনও ১০ কিলোমিটার ঘুরে এই নদী পার হতে হয় এসব এলাকার মানুষকে। এই দুর্ভোগ লাঘবে নদীটিতে স্থানীয়দের উদ্যোগে ২৫০ ফুটের দৈর্ঘের একটি বাঁশের সেতু তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার, যিনি খামারবাসা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। সে বলে, বর্ষাকালে স্কুলে যেতে খুব ভয় করত। নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনাও অনেকবার ঘটেছে। আমরা আতঙ্কে থাকতাম। এখন আর সে ভয় নেই, বাঁশের সেতু দিয়ে নিরাপদে বিদ্যালয়ে যেতে পারব।
খামারবাসা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমীর হোসেন বলেন, দুই পারের ছেলেমেয়েরাই আমার বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। এতে ওই পারে থাকা শিক্ষার্থীরা বর্ষাকালে নৌকা দিয়ে আসতে হতো বিদ্যালয়ে। এতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এক ধরনের ভয় কাজ করত। এখন আপাতত বাঁশের সেতু হওয়ায় অনেক উপকার হয়েছে।
নিচিন্তপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান জুয়েল বলেন, এই নদী দুটি উপজেলাকে বিভক্ত করেছে। দুই পারের মানুষ শীত মৌসুমে হেঁটে পারাপার হয়। কিন্তু বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া কোনো উপায় নেই এসব অঞ্চলের মানুষের। স্থানীয়দের উদ্যোগ ও বিএনপি নেতা সালমান ওমর রুবেল বাঁশের সেতুটি নির্মাণ করায় কিছুটা হলেও আমাদের কষ্ট লাঘব হবে।
এই সেতু নির্মাণের উদ্যোক্তা সালমান ওমর রুবেল বলেন, আমি কিছুদিন পূর্বে এই এলাকায় এসেছিলাম। একটি সেতুর জন্য ২২ গ্রামের মানুষের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এলাকার মানুষ আমার কাছে সেতু নির্মাণে সহযোগিতা চেয়েছিলেন। তাদের চাওয়া থেকে বাঁশের সেতু নির্মাণে সহযোগিতা করেছি। আশা করছি নদীর দুই পারের মানুষ উপকৃত হবে। তবে ভবিষ্যতে সেখানে একটি ইটের সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ধোবাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, বাঁশের সেতু নির্মাণের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে ওই এলাকায় সেতুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেতু নির্মাণ হলে ওই এলাকার মানুষ উপকৃত হবে। মন্ত্রণালয়ে একটি পাকা সেতুর জন্য চিঠি পাঠানো হবে।