মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫ ২০:৫৬ পিএম
আনুষ্ঠানিকভাবে মঙ্গলবার (১৭ জুন) থেকে বাজারে আসতে শুরু করেছে দেশসেরা ‘হাঁড়িভাঙ্গা’ আম। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা-উপজেলা প্রশাসন। পাইকাররা বাগান থেকে আম সংগ্রহ শুরু করেছেন। এবার খরতাপ ও অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে হাঁড়িভাঙ্গা আম আগাম পাকতে শুরু করেছে। তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই বাজারে আসছে।
রংপুরের মিঠাপুকুরের পশ্চিমে এঁটেলমাটি বিধৌত অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ‘হাঁড়িভাঙ্গা’ আমের বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রচুর পরিমাণ আমের ফলন হয়। স্বাদে অনন্য এই আমের দেশব্যাপী কদর রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে বাগান গড়ে তুলেছেন স্থানীয় চাষীরা। স্বাদে-মানে অনন্য এই আম ইতোমধ্যে ‘জিআই’ স্বীকৃতি পেয়েছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের জায়গীর বাসস্ট্যান্ড থেকে পশ্চিমে রানীপুকুর-এরশাদমোড় সড়ক ধরে গেলে খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানী গ্রামের দেখা মিলবে। এ গ্রামের মৃত নফেল উদ্দিনের হাত ধরে ২০ বছর আগে প্রথম হাঁড়িভাঙ্গা আম বাজারে আসে। ধীরে ধীরে পাশের ময়েনপুর, চেংমারী, বালুয়া মাসিমপুর, রানীপুকুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় হাঁড়িভাঙ্গা আম গাছের চাষ। পরে এসব এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে বাগান গড়ে ওঠে।
মিঠাপুকুর কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার এই উপজেলায় ২৬ হাজার মেট্রিক টন হাঁড়িভাঙ্গা ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ মৌসুমে দেড় কোটি টাকার কেনাবেচা হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। এবার ৩টি দেশ ভারত, জার্মানি ও মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হবে ২০ থেকে ৩০ টন হাঁড়িভাঙ্গা।
হাঁড়িভাঙ্গা আমের রাজ্য খোড়াগাছ, ময়েনপুর, চেংমারী ও বালুয়া মাসিমপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাগানে বাগানে আম পাড়ার (সংগ্রহ) ধুম। আমবাগানের মালিক, ব্যবসায়ী, পাইকার, মৌসুমি আম বিক্রেতা, পরিবহন ব্যবসায়ীÑ সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাঁড়িভাঙ্গা আম বাজারজাত করার ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মিঠাপুকুর উপজেলায় ১ হাজার ২৬৮ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। এর বাইরে বাড়ির পাশে পতিত জমি, রাস্তার দুই ধারেও রোপণ করা হয়েছে হাঁড়িভাঙ্গা আমের গাছ। এবার শুরুতে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙ্গা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চেংমারী ইউনিয়নের চেংমারী গ্রামে একটি হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান কিনে নিয়েছেন ব্যবসায়ী তাইফুর রহমান। তিনি জানালেন, ‘এক একর আয়তনের মোট ২ লাখ টাকায় কিনেছি। ৩ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।’ ময়েনপুর ইউনিয়নের ফুলচৌকি গ্রামের আমবাগানের মালিক মাসুদ চৌধুরী ১০ একর (৪ হেক্টর) জমিতে বাগান করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবার আম ভালো হয়েছে। চাহিদাও বেশ ভালো। সাজেদুল কবীর নামে একজনের ৫ একরের বাগান রয়েছে।’
হাঁড়িভাঙ্গার অন্যতম উৎপাদন এলাকা খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ বাজারে প্রতিবছর সবচেয়ে বড় হাঁড়িভাঙ্গা আমের হাট বসে। এই হাটে আমের আকার ও মানভেদে প্রতিমণ আম দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ী মণ্ডল মিয়া, শাকিল আহমেদ ও মোকছেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা পদাগঞ্জ ও এর আশপাশের এলাকা থেকে হাঁড়িভাঙ্গা আম কিনি। এগুলো কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। প্রতি মৌসুমে এমনটা করে থাকি। কখনও লাভ বেশি হয়, কখনও কম।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন বলেন, এবারও ভারত, জার্মানি ও মালয়েশিয়ায় কিছু আম রপ্তানি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে এবারে অল্প পরিমাণে ২৫ থেকে ৩০ টন হাঁড়িভাঙ্গা রপ্তানি হবে।’
উপজেলা ইউএনও ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুলতামিস বিল্লাহ বলেন, ‘আমাদের মিঠাপুকুর এলাকার উৎপাদিত হাঁড়িভাঙ্গা আম স্বাদে, গুণে-মানে অনন্য। সারা দেশে এই আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে পাঠানো হয়ে থাকে। এই আমের সুখ্যাতি বিদেশেও। জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পয়েছে। হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাজারজাতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, এ জন্য তদারকি অব্যাহত আছে।
রংপুর জেলা প্রশাসক, মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ‘রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম আমাদের রংপুরের গর্ব। জিআই পণ্য হিসেবে হাঁড়িভাঙ্গা আম সরকারিভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ অঞ্চলের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে।