সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫ ২০:৪৯ পিএম
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫ ২১:০১ পিএম
নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম।
দা দিয়ে কুপিয়ে পাঁচ রাজাকার বধ করে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে আলোড়ন তোলা কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার সাহসী নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম (৯২) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর ৫টায় বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া গ্রামে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার গুরুই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম। বাবা সোনাফর মিয়া এবং মা দুঃখী বিবি। তার প্রকৃত নাম সখিনা বেগম হলেও এলাকায় তিনি ‘খটকি’ নামে পরিচিত ছিলেন। নিঃসন্তান সখিনা বেগমের স্বামী কিতাব আলী মুক্তিযুদ্ধের আগেই মারা যান। তিনি ভাগ্নি ফাইরুন্নেছা আক্তারের কাছে থাকতেন, যিনি তাকে শেষ বয়সে দেখাশোনা করতেন।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব নারী বীরত্বের সঙ্গে রণাঙ্গনে লড়াই করে সাহসিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম সখিনা বেগম। তার সাহসিকতার কথা এখনও স্থানীয়দের মুখে মুখে। ১৯৭১ সালে সখিনার ভাগনে মতিউর রহমান সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে হানাদার পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের হাতে শহীদ হন। ওই সময় তিনি গুরুই এলাকায় ‘বসু বাহিনীর’ নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রাঁধুনির কাজ করতেন। তবে রান্নার পাশাপাশি তিনি রাজাকারদের গতিবিধি সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জানাতেন। একসময় ধরা পড়ে যান পাক বাহিনীর হাতে। সেখান থেকে পালিয়ে এসে তিনি একটি ধারালো দা সংগ্রহ করেন এবং সেই দা দিয়েই প্রতিশোধ নেনÑ নিজ হাতে পাঁচ কুখ্যাত রাজাকারকে হত্যা করেন। তার ব্যবহৃত সেই দা বর্তমানে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে, নামফলকে সখিনা বেগমের নাম উল্লেখ আছে। একাত্তরের সাহসিকতা ও বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব পান।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও লেখক জাহাঙ্গীর আলম জাহান বলেন, আমার বইয়ে সখিনার বীরত্বের বিস্তারিত বিবরণ আছে। ১৯৯৬ সালে আমার এবং পিন্স রফিক খানের লেখার মাধ্যমে প্রশাসনের নজরে আসে সখিনার অবদান এবং সে বছরই তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি লাভ করেন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা চান্দালী মিয়া বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত অর্থেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বাত্মকভাবে অংশ নিয়েছিলেন। নিকলীকে রাজাকারমুক্ত করতে সখিনার অবদান ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
নিকলী উপজেলার গুরুই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোতা মিয়া বলেন, নিকলীতে সখিনাকে দেখাশোনার কেউ না থাকায় তিনি বাজিতপুরে ভাগ্নির কাছে থাকতেন। সেখানেই ভোরে মারা যান তিনি। বিকালে আসরের নামাজ শেষে গুরুই ঈদগাহ মাঠে জানাজা ও পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানা মজুমদার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।