অরুপ রতন, বগুড়া
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫ ১৭:৩৪ পিএম
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫ ১৭:৩৬ পিএম
আকাশে ওড়ার সঙ্গে চলবে সড়কেÑ এমন এক বিশেষ যান তৈরির কাজ শুরু করেছেন ৬৫ বছর বয়সি যন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেন। বগুড়া শহরের বারোপুর এলাকায় নিজের প্রতিষ্ঠিত কারখানায় তিনি তৈরি করছেন অভিনব এই যান, যা কোনো ধরনের জ্বালানি বা গ্যাস ছাড়াই চলবে। শহরের কাটনারপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল জব্বার ওরফে ধলু মেকারের ছেলে আমির হোসেন বলেন, ‘আমার বানানো এই যানটি রাস্তায় যেমন চলতে পারবে, তেমনি প্রয়োজনে ছয় ফুট সামনে-পেছনে খালি জায়গা পেলেই আকাশে উড়তে পারবে।’
আমির হোসেনের উদ্ভাবিত যানে থাকবে দুটি ইঞ্জিনÑ একটি ইলেকট্রিক টারবাইন, অপরটি ছয়টি লিথিয়াম ব্যাটারিচালিত। রাস্তায় চলার সময় গাড়ি নিজেই চার্জ তৈরি করে সেই চার্জ ব্যাটারিতে জমা রাখবে। সেই শক্তিতেই আকাশে ওড়ানো যাবে যানটি। ব্যাটারিগুলো কখনই আলাদাভাবে চার্জ দিতে হবে নাÑ এটি হবে একটি স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সিস্টেম। এই যানটি চালকসহ মোট চারজন যাত্রী বহন করতে পারবে। আকাশে ওড়ার সময় এটি মেঘের ওপর দিয়ে উচ্চতায় চলতে সক্ষম হবে বলে দাবি করেন উদ্ভাবক আমির হোসেন।
যন্ত্র তৈরির ঐতিহ্য তার রক্তে। আমির হোসেন জানান, ‘১৮৮০ সাল থেকে তাদের পরিবার লোহার যন্ত্রাংশ তৈরি করে আসছে।’ তার দাদা কলকাতা থেকে লোহা এনে কামারশালায় তৈরি করতেন দা, কুড়াল, গরুর গাড়ির লাল। সেগুলো উত্তরবঙ্গজুড়ে ছড়িয়ে পড়ত।
১৯৪০ সালে তার বাবা কলকাতায় গিয়ে যানবাহনের স্পেয়ার পার্টস তৈরি শেখেন এবং দেশে ফিরে সেগুলোর ডিজাইনে পরিবর্তন আনার কাজ শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে মাত্র ৭ বছর বয়সে বাবার কামারশালায় হাতেখড়ি আমির হোসেনের। পরিবারের নিয়ম ছিলÑ সব ছেলেকে স্কুল শেষে অন্তত দুই ঘণ্টা কামারশালায় কাজ শিখতে হতো।
তারপর তিনি নিজেই শুরু করেন যন্ত্র উদ্ভাবনের কাজ। নব্বইয়ের দশকে তিনি প্রথম চিকন সেমাই তৈরির যন্ত্র আবিষ্কার করেন, যা পরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
আমদানিনির্ভর কৃষি যন্ত্রাংশের বিকল্প হিসেবে তিনি তৈরি করেন শ্যালো ইঞ্জিনের লায়নার, পিস্টন, রিং। যেখানে বিদেশি যন্ত্রাংশের দাম পড়ত কয়েক হাজার টাকা, সেখানে তিনি তা তৈরি করে কৃষকদের হাতে তুলে দেন মাত্র কয়েকশ টাকায়।
পরবর্তী সময়ে তিনি তৈরি করেন ধান ও ভুট্টা মাড়াইয়ের মেশিন, ধান কাটার মেশিন, এমনকি স্বয়ংক্রিয় কম্বাইন হারভেস্টার তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে তার।
আমির হোসেন জানান, ‘ইন্টারনেটে বিভিন্ন দেশের আকাশগাড়ির মডেল দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন।’ খুব দ্রুতই সড়কে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়িটি চালু করার ইচ্ছা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে আকাশে ওড়ানোর মতো প্রস্তুত করতে আরও কিছু সময় ও অর্থ দরকার। এখন পর্যন্ত যান তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৪-১৫ লাখ টাকা। ওড়ানোর পর্যায়ে নিতে গেলে আরও ১০-১১ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই যানটা মূলত দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে বানাচ্ছি। যানজটে আটকে পড়লে যেন উড়াল দিয়ে বের হওয়া যায়। আর দুর্গম সীমান্ত এলাকায় সীমান্তরক্ষীরা যেন দ্রুত টহল ও উদ্ধার কাজ চালাতে পারেন।’