× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

লাখ টাকার বরাদ্দে ৪৫ প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা

আরমান হেকিম

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫ ০৯:৫০ এএম

আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫ ১৭:৩১ পিএম

লাখ টাকার বরাদ্দে ৪৫ প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা

নতুন অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৪৫টি প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা করে। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকার বেশি হলেও চলতি অর্থবছরে এসব প্রকল্পের জন্য এ বরাদ্দও ঠিক রাখা হয়েছে, যাতে এডিপি থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া না হয়। অর্থাৎ প্রকল্পগুলো এডিপির খাতায় থাকলেও বাস্তবে কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষায়, ‘বাঁচিয়ে রাখার’ জন্যই এ বরাদ্দ।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য বলছে, এই ৪৫ প্রকল্পের অনেকগুলোর মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আবার বেশ কয়েকটি প্রকল্প এখনও মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন শুরুই করেনি। নতুন প্রকল্পের অনুমোদন হলেও বরাদ্দ কমানোর কারণ হিসেবে চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং সরকারের সীমিত আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়টি দেখানো হয়েছে।

এডিপির নীতিমালা অনুযায়ী, প্রকল্পের বরাদ্দ শূন্য রাখা যায় না। এতে প্রকল্পটি এডিপির তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। ফলে শুধুমাত্র টিকিয়ে রাখার জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দের এই ব্যবস্থা। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ও ব্যয় বৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলে তখন বাড়তি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে।

মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও খাতায় রয়েছে বরাদ্দ

‘বাংলাদেশ টেলিভিশনের ছয় বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি জুনেই। কিন্তু বাস্তবায়নকাল বাড়ানো ছাড়া অর্থ ছাড়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। এডিপিতে প্রকল্পটি ‘তারকা’ চিহ্নিত করে মাত্র ১ লাখ টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরেও (২০২৩-২৪) সংশোধিত এডিপিতে একইভাবে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। প্রকল্পটি ২০১৭ সাল থেকে ঝুলে আছে।

এ ধরনের বরাদ্দের তালিকায় রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত উন্নয়ন ও সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পও। ২০১৮ সালে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুনে। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে এটিতেও বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৭৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

আবার ‘গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সমবায়ভিত্তিক বহুতল ভবনবিশিষ্ট পল্লী জনপদ নির্মাণ’ প্রকল্পের অবস্থাও একই। এ প্রকল্পের অনুমোদন ২০১৪ সালে হলেও এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশের বেশি হয়নি। মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারকা চিহ্ন দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রকল্প স্থবির

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের মোট ব্যয় ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৫ সাল থেকে প্রকল্পের কাজ চলছে। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হলেও কাজ শেষ হয়নি। এবারও বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ জুনে শেষ হয়েছে।

এ ধরনের বরাদ্দ পাওয়া আরও প্রকল্পের মধ্যে রয়েছেÑ চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স স্থাপন, ভান্ডারিয়া উপজেলার নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, জাতীয় নিউরো সায়েন্স ইন্সটিটিউট সম্প্রসারণ, গাজীপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জে হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, থানচি-রিমাকরি-মদক-লিকরি সড়ক নির্মাণ, সীমান্ত সড়ক নির্মাণ, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়কের চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প।

রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেট পুনর্বাসন প্রকল্প, মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য তেল অপসারণ ব্যবস্থা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প-সবগুলোরই অবস্থা এক।

এ বিষয়ে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, ‘প্রকল্প নেওয়ার সময় গুরুত্ব একরকম থাকে। পরে সরকার সিদ্ধান্ত বদলালে প্রকল্প পেছায়। কিন্তু যেহেতু প্রকল্প একবার নেওয়া হয়েছে, তাই সামান্য বরাদ্দ দিয়ে এডিপির বইতে রাখা হয়। শূন্য বরাদ্দ খারাপ দেখায়। ফলে এক লাখ টাকা রাখা হয়। সরকার চাইলে ভবিষ্যতে এসব প্রকল্প আবার চালু করতে পারবে।’

তবে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ সংকট এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতির ধীরগতির কারণে এসব প্রকল্পে নতুন অর্থ ছাড় আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

সরকারি নীতিনির্ধারক মহলে আলোচনায় রয়েছে, নতুন প্রকল্প নেওয়ার আগে পুরনো এসব ঝুলে থাকা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা দরকার। কারণ এসব প্রকল্পের কারণে প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে ৪৫টি প্রকল্পের বরাদ্দ ১ লাখ টাকা করে। সংশোধিত এডিপিতে এসব প্রকল্পে ৫ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ ছিল। এর বাইরে আরও কয়েকটি প্রকল্প নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হলেও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে প্রকল্প সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা ও বিদেশি সাহায্য কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার প্রকল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা