সন্যাসতলী মেলা
জয়পুরহাট ও ক্ষেতলাল প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ২২:০৪ পিএম
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫ ২২:২১ পিএম
জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার তুলশীগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত সন্যাস মন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উপলক্ষে বসেছিল ঐতিহ্যবাহী সন্যাসতলী মেলা। দুই শতাব্দী ধরে চলে আসা এই মেলা শুধু একটি ধর্মীয় আয়োজন নয়, এটি হিন্দু-মুসলিম মিলনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তুলশীগঙ্গা নদীর আঁকাবাঁকা ধারঘেঁষে বসা এই মেলায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে গ্রামীণ সংস্কৃতি ও লোকজ ঐতিহ্য।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, স্নান, পূজা ও পারিবারিক মিলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই মেলার ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সন্যাস পূজাকে কেন্দ্র করেই এ মেলার সূচনা। সেই থেকে প্রতি বছর বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার (১৩ জুন) বিকালে আয়োজন করা হয় এই দুই দিনব্যাপী মেলার। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, সময়ের পরিক্রমায় এটি রূপ নিয়েছে একটি বৃহৎ উৎসবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে এটি রূপ নেয় এক বিশাল মিলনমেলায়।
মেলার মূল আকর্ষণ রঙ-বেরঙের ঘুড়ি। নানা আকার ও নকশার ঘুড়ি দেখতে ও কিনতে ভিড় জমায় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি মানুষ। তবে শুধু ঘুড়িই নয়, মেলায় বসে রকমারি মিষ্টির দোকান, বাঁশ, কাঠ ও লোহার তৈরি গৃহস্থালির সামগ্রী, মাছ ধরার যন্ত্র, খেলনা, মাটির তৈজসপত্র, প্রসাধনী, বাঁশের তৈরি সরঞ্জাম, নকশিপাখা, হাসুয়া-দা-বটির দোকানসহ নানা ধরনের স্টল। মাছ ধরার সুতার জাল, খৈলসুন, চাঁইয়ের দোকানও ছিল ভিড়জমানো।
এই মেলার অন্যতম বিশেষত্ব ঘুড়ি। ছোট-বড় সবার অংশগ্রহণে আকাশজুড়ে রঙিন ঘুড়ির ছড়াছড়ি।
মনজু মিয়া নামে এক বিক্রেতা বলেন, আমি আট-দশ বছর ধরে এখানে ঘুড়ি বিক্রি করছি। বিক্রি ভালো হয়, মানুষও খুব আগ্রহ নিয়ে কেনে।
সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এ মেলায় আসে শুধু ঘুড়ি নয়, নানা প্রয়োজনে কেনাকাটা করতেও। সিরাজগঞ্জের ফারুক হোসেন বলেন, প্রতি বছরই আসি, এখানকার ঘুড়ি অন্য জায়গার চেয়ে অনেক ভালো ও বৈচিত্র্যময়।
স্থানীয় দুলাল ও কাজী রফিকুল বলেন, আমাদের বাবা-দাদারা যেমন এই মেলায় অংশ নিতেন, আমরাও সে ধারা ধরে রেখেছি। মেলা উপলক্ষে জামাই-স্বজনদের আপ্যায়নের ধারা চলে আশপাশের গ্রামজুড়ে।
মেলায় আসা মিলন হোসেন বলেন, এ মেলা আমাদের গ্রামের উৎসব। আত্মীয়স্বজন আসে, ছেলেকে ঘুড়ি কিনে দিয়েছি, নানা জিনিসও কিনেছি। আট বছর বয়সি সোহা বলে, আমি অ্যাঙ্কেলের সঙ্গে এসেছি, ঘুড়ি কিনেছি, অনেক ভালো লেগেছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মামুন বলেন, এ মেলা শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নয়, সব ধর্মের মানুষের মিলনমেলা। ঘুড়ির প্রতি মানুষের ভালোবাসাই এই মেলার প্রাণ।
মেলার সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ঘুড়ি উড়ানো। এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্বে ছিলেন, কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি।
সন্যাস মন্দির কমিটির সভাপতি মন্টু চন্দ্র জানান, ‘এই মেলা হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলে পরিচালনা করে থাকি। এটি শুধু ধর্মীয় নয়, একটি সামাজিক উৎসব হিসেবেও পরিচিত।’