প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ২১:১২ পিএম
দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পুশইন অব্যাহত রেখেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এর ধারাবাহিকতায় চার জেলার সাত সীমান্ত দিয়ে আরও ৭৬ জনকে পুশইন করেছে তারা। যার মধ্যে মানুষের মধ্যে চারজন ভারতীয় নাগরিক এবং ২৫ জন রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছেন। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার (১৪ জুন) ভোর পর্যন্ত এসব পুশইনের ঘটনা ঘটে। পুশইন ঠেকাতে বিজিবির পাশাপাশি সচেতন রয়েছেন স্থানীয়রাও। দুই সীমান্তে পুশইনের চেষ্টা ব্যর্থ করেছেন তারা। পুশইনের শিকার অন্য ব্যক্তিদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর বা আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
ঠাকুরগাঁও সীমান্তে ২৩ জনকে পুশইন
ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ২৩ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে বিএসএফ। শনিবার ভোরে উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের চাপসার সীমান্ত দিয়ে এই পুশইন করা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পেরে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটককৃতদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ, ১২ জন নারী এবং ৭ জন শিশু রয়েছে।
বিজিবি জানায়, শনিবার ভোরে হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের চাপসার বিওপির আওতাধীন সীমান্তের মেইন পিলার ৩৪৭/১-এস থেকে আনুমানিক ২০০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে চৈত্রাণপুকুর নামক স্থানে বিএসএফ অবৈধভাবে ২৩ জনকে পুশইন করে। ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের টহল দল বিষয়টি টের পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হরিপুর থানায় সোপর্দ করে।
হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকারিয়া মণ্ডল বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থান করছিলেন। তাদের পরিচয় শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। পরিচয় পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পঞ্চগড়ে ৪ ভারতীয়সহ ১৬ জনকে পুশইন
পঞ্চগড়ে দুই সীমান্ত দিয়ে ৪ ভারতীয় নাগরিকসহ ১৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। শনিবার ভোরে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের মিস্ত্রিপাড়া সীমান্ত দিয়ে ১১ জন ও তেতুঁলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের পেদিয়াগছ সীমান্ত দিয়ে পাঁচজনকে পুশইন করা হয়। বিজিবির টহল দল স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের আটক করে সদর ও তেঁতুলিয়া থানায় জিডিমূলে হস্তান্তর করে।
সদর উপজেলায় আটক চার ভারতীয় নাগরিক হলেন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হাবড়া থানার বালিহাটি এলাকার আজিজুল আলী ম-ল (৩১), তার স্ত্রী আজমিরা খাতুন (২৫), তাদের মেয়ে ফতেমা খাতুন (৭) ও ছেলে ইরানুর আলী ম-ল (৪)। তাদের মিস্ত্রিপাড়া বিজিবি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের ভারতে ফেরত পাঠানোর কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
এদিকে তেতুঁলিয়া উপজেলার পেদিয়াগছে আটক ৫ বাংলাদেশিকে তেতুঁলিয়া ডাকবাংলোতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
বিজিবি জানায়, পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নে পঞ্চগড় ব্যাটালিয়ন ১৮ বিজিবির মিস্ত্রিপাড়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সীমান্তের মেইন পিলার ৪২১ এলাকা দিয়ে বিএসএফের ১৩২ ব্যাটালিয়নের ইশানগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা ১১ জনকে পুশইন করে। তাদের উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের রজলী বাজার এলাকা থেকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আটক করে বিজিবি। পরে তাদের সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ ছাড়া পঞ্চগড় ব্যাটালিয়ন ১৮ বিজিবির অধীনস্থ পেদিয়াগছ বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সীমান্তের মেইন পিলার ৪৩২ এর ১ নম্বর সাব পিলার এলাকা দিয়ে বিএসএফের ১৩২ ব্যাটালিয়নের পুরোহিতগছ ক্যাম্পের সদস্যরা ৫ বাংলাদেশিকে পুশইন করে। পরে তাদের ৮০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দক্ষিণ পেদিয়াগছ এলাকা থেকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আটক করে বিজিবি। তাদের তেতুঁলিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনিরুল ইসলাম বলেন, সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে পুশইন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জন বাংলাদেশি ও ৪ জন ভারতীয়। আমরা বাংলাদেশিদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। আর ভারতীয়দের বিএসএফের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে।
১২ জনকে পুশইন, ৯ জনকে পুশব্যাক
লালমনিরহাটের দুই উপজেলার তিন সীমান্ত দিয়ে আরও ১২ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। শনিবার ভোরের দিকে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা সীমান্ত এই পুশইনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ৯ জনকে আবারও ভারতে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।
বিজিবি ও স্থানীয়রা জানান, হাতীবান্ধা উপজেলার বনচৌকি সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ তিনজনকে পুশইন করে। সকালে গ্রামবাসী তাদের আটক করে বিজিবির হাতে তুলে দেয়। অপরদিকে একই উপজেলার পূর্ব সারডুবি সীমান্ত দিয়ে তিনজনকে পুশইন পরে বিএসএফ। তবে বিজিবি ও গ্রামবাসীর চেষ্টায় তাদের ফেরত পাঠানো হয়।
এদিকে পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া সীমান্ত দিয়ে ভোরে ছয় নারী-পুরুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। পরবর্তীতে বিজিবি ও সীমান্তের লোকজন তাদেরকে আবারও সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ওপাশে ভারতীয় অংশে ফেরত পাঠিয়েছে।
২৫ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে পুশইন
মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ২৫ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে পুশইন করেছে বিএসএফ। গত শুক্রবার ভোরে এবং শুক্রবার রাতের বিভিন্ন সময়ে বিজিবির নিউ পাল্লাথল বিওপি ও লাতু বিওপির টহল দল পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করেছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ, ৭ জন নারী ও ১৩ শিশু রয়েছে। তারা কক্সবাজার শরণার্থী ক্যাম্পে ছিলেন। সেখান থেকে বিভিন্ন সময় দালালের মাধ্যমে তারা পালিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ভোরে উপজেলার নিউ পাল্লাথল বিওপি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ১৩ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে বাংলাদেশিকে পুশইন করে বিএসএফ। পরে তারা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করলে এলাকাবাসীর সহায়তায় বিজিবি তাদের আটক করে। অন্যদিকে শুক্রবার রাতে লাতু বিওপির এলাকা দিয়ে আরও ১২ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। বিজিবি তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করে বড়লেখা থানায় হস্তান্তর করেছে।
বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমান শনিবার বিকালে বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান।
বিজিবির কড়া নজরদারির পরও বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে বিএসএফের পুশইন অব্যাহত রয়েছে। এতে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। এ পর্যন্ত বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে পুশইনের শিকার ২৮৫ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছেন লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিবেদক