মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ
শেখ সোহেল, বাগেরহাট
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ২১:০৩ পিএম
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫ ২১:০৭ পিএম
৫৮ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে ফের সরগরম হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ সামুদ্রিক মাছের আড়ত বাগেরহাটের কেবি বাজার। কিন্তু শুরুতেই সাগরে মাছ কম পাওয়ায় হতাশ জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে বাগেরহাট দড়াটানা নদীর তীরে শহররক্ষা বাঁধ সংলগ্ন কেবি বাজারে জেলে, পাইকার, আড়তদার ও মাছ ক্রেতাদের হাঁকডাক শোনা যায়। কেউ ট্রলার দিয়ে ঝুড়িতে করে মাছ নিয়ে আসছেন। কেউ আবার মাছ কিনতে পাইকার ডাকছেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, অবরোধ শেষে বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরা শুরু হয়েছে।
কাকডাকা ভোর থেকে কেবি বাজারে প্রতিদিন কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। এখানে সবেচেয়ে বেশি ইলিশ মাছ বেচাকেনা হয়। এখানে ইলিশের পাশাপাশি কাউয়া, চেলা, ঢেলা চেলা, লইট্টা, ভোল, কঙ্কন, কইয়া ভোল, জাবা ভোল, মোচন গাগড়া, মেইদ, ট্যাংরা, রূপচাঁদা, বোতলসহ প্রায় ৫০ ধরনের মাছ বিক্রি হয়। সাগর থেকে ধরা বড় বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার বাজারে ইলিশের দর ছিল ২০০-৩০০ গ্রাম ওজনের : প্রতি কেজি ৬০০-৮০০ টাকা, ৫০০-৮০০ গ্রাম ওজনের : প্রতি কেজি ১২০০-১৫০০ টাকা, ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের : প্রতি কেজি ২০০০-২৫০০ টাকা। এ ছাড়া রূপচাঁদা বিক্রি হয়েছে আকারভেদে প্রতি কেজি ৫০০-১২০০ টাকায়। কঙ্কন, তুলারডাঁটি, ঢেলাচ্যালা, ভেটকি, লইট্টা, ছুরি, জাবা, বিড়ালজাবাসহ বিভিন্ন মাছ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দরে। তবে সরাসরি সাগর থেকে ধরা মাছের পাশাপাশি বিদেশি হিমায়িত মাছও বিক্রি হয় এই হাটে।
বাজারে মাছ কিনতে আসা রনি শেখ বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বাজারে আজকে (গতকাল) বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাছ উঠেছে। আমার কাছে সমুদ্রের মাছ খুব ভালো লাগে। আর আমি কোলস্টোরের মাছ খেতে পছন্দ করি না। তাই আজকে তাজা মাছ কিনতে এসেছি।’
মাছ বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে বাজারে যদি সমুদ্রের মাছ না থাকে, তাহলে বাজারি জমে না। এতদিনে সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ ছিল, ভালো মাছ বিক্রি করতে পারিনি। কোলস্টোরের মাছ বিক্রি করতে পারেনি আর মানুষ কিনতেও চায় না। আমি চাই ক্রেতাদের ভালো কিছু খাওয়াতে।’
ট্রলার থেকে মাছ ধরে আনা জেলে এবাদুল ইসলাম বলেন, ‘অবরোধের পর সাগরে গিয়ে তেমন মাছ পাইনি। যে মাছ পেয়েছি, তাতে হয়তো খরচটাও উঠবে না।’
কেবি বাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘অবরোধ শেষে আজ প্রথম ট্রলার এসেছে, মাছও কম। তবে পাইকারদের উপস্থিতি বেশি থাকায় দাম কিছুটা বেশি। সামনে মাছের সরবরাহ বাড়লে দামও কমে আসবে।’
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘উপকূলীয় ৪৭৫
প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের মধ্যে অনেকগুলোরই প্রজনন মৌসুম এই সময়েই পড়ে। এ ছাড়া চিংড়ি মাছ রয়েছে এই সময়ে তাদের বংশ বিস্তার এ সহায়তা করে। সবকিছুরই সুরক্ষার ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। যেমনÑ ধরেন সুন্দরবনে দেওয়া হয় কেউ যাতে বড়শি, জাল, বিষ প্রয়োগ করে মারতে না পারে। এতে মাছের বংশবিস্তারে সহায়তা করে। ফলে ৫৮ দিনের এই বিরতিতে সাগরে মাছের বংশবৃদ্ধি নির্বিঘ্ন হয়েছে, যা আগামী দিনে আরও বেশি মাছ পাওয়া যাবে আশা করা যায়।’
উল্লেখ্য, সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও মজুদ বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার প্রতিবছর ২০ এপ্রিল থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে এবার জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞার সময় এগিয়ে এনে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের জন্য তা কার্যকর করা হয়। এ সময়ে ইলিশসহ সব ধরনের সামুদ্রিক মাছ ধরা এবং গভীর সমুদ্রে ট্রলার চলাচল নিষিদ্ধ ছিল।