সাদিকুর রহমান সামু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ২০:৪৮ পিএম
আজ ১৪ জুন মাগুরছড়া ট্র্যাজেডি দিবস। সময়ের পরিক্রমায় আবার ঘুরে এলো ভয়াবহ গ্যাসকূপ ট্র্যাজেডির ১৪ জুন। গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের ২৮ বছরেও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারেনি সরকার। ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন এই দিনে কমলগঞ্জের মাগুরছড়া গ্যাসকূপে ড্রিলিং কাজ চলাকালে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বিকট শব্দে কেঁপে উঠে কমলগঞ্জ। আগুনের লেলিহানে লাল হয়ে উঠে মৌলভীবাজার জেলা।
আগুনে পুড়ে যায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল, চা বাগান ও খাসিয়া জুম। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রেলপথ, সড়কপথ, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। পুড়ে যায় বনের দুর্লভ বন্যপ্রাণীসহ হাজার হাজার জীববৈচিত্র্য।
বিস্ফোরণে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের পর সেই সময়কার সরকার উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তাকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে। গঠিত সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজও সবার সামনে প্রকাশ না করা হয়নি। ফল কমলগঞ্জবাসী অর্থ্যাৎ বৃহত্তর সিলেটবাসী আজও রহস্যের ঘেরাটপেই রয়ে গেছে।
অক্সিডেন্টাল কোম্পানি মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ডে স্মরণকালের এই বিস্ফোরণের পুরো ক্ষয়ক্ষতি পরিশোধ না করেই অন্য মার্কিন কোম্পানি ইউনিকলের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে দেশ ছাড়ে।
কমলগঞ্জে ১৯৮৪-৮৬ ও ১৯৯৪ সালে সাইসলিক সার্ভে লাউয়াছড়া ফরেস্ট বিটের অভ্যন্তরে মাগুরছড়া এলাকায় গ্যাস মজুদের সন্ধান পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন ভাগাভাগির চুক্তিতে ১৯৯৫ সালের ১১ জানুয়ারি মার্কিন বহুজাতিক তেল ও গ্যাস উত্তোলণকারী কোম্পানি অক্সিডেন্টালের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই হয়।
দায়িত্ব নেওয়ার পর অক্সিডেন্টাল কোম্পানি মাগুরছড়ায় গ্যাস ফিল্ডের ড্রিলিং কাজের জন্য সাবলিজ দিয়েছিল ডিউটেক নামের একটি জার্মান কোম্পানির কাছে। গ্যাস উত্তোলনে ১৪ নম্বর ব্লকের মাগুরছড়ার মৌলভীবাজার-১ গ্যাসকূপের খননকালে ৮৫০ মিটার গভীরে যেতেই ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মধ্যরাতে ঘটে সেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
দুর্ঘটনার পর ইউনিকল কিছুদিন কাজ করার পর আরেক মার্কিন কোম্পানি শেভরনের কাছে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায়। বর্তমানে শেভরন রয়েছে দায়িত্বে।
মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির পর গঠিত একটি তদন্ত কমিটি ওই বছরের ৩০ জুলাই এক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী গ্যাসক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য ২৪৫.৮৬ বিসিএফ গ্যাস ধ্বংস হয়। বন ও পরিবেশের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। পানি সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। দুই বলিউমে ৫০০ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্টেও ক্ষতির অনেক বিবরণ রয়েছে। এ অগ্নিকাণ্ডের ২৮ বছর পার হলেও আজও মার্কিন কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়নি।
মাগুরছড়া ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে আজ পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন মাগুরছড়া এলাকায় মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে। গ্যাস বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও কমলগঞ্জের ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের দাবিতে কর্মসূচি পালন করা হবে।