হাতির আক্রমণে মৃত্যু
শেরপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ২০:৪৩ পিএম
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫ ২০:৪৫ পিএম
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা গান্ধীগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আজিজুর রহমান (৪২) ছিলেন ভ্যানচালক। তার উপার্জনে স্ত্রী ও তিন সন্তানের সংসার চলত। একই অবস্থা বড় গজনি অবকাশ কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দা মিস্টার এফিলিসের (৫০)। তিনি ছিলেন দিনমজুর। তার উপার্জনেই চলত স্ত্রী ও দুই সন্তানের সংসার। তাদের উভয়ের পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকলেও এখন তারা নেই। বন্য হাতির আক্রমণে দুজনেরই মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনাটি ২০ মে সোমবার রাত ৯টার দিকে। মাত্র দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে কাংশা ইউনিয়নের দরবেশতলা ও বাঁকাকুড়া এলাকায় মর্মান্তিক এ দুটি ঘটনা ঘটে। বন বিভাগ বলছে, বিধি অনুযায়ী পরিবার দুটিকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
নিহতদের স্বজনরা জানায়, ঘটনার রাতে আজিজুর রহমান গজনি দরবেশতলা ঝুরা এলাকা থেকে বালু আনতে গিয়েছিলেন। এ সময় একদল বন্য হাতির আক্রমণের শিকার হন তিনি। স্থানীয় লোকজন মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়িয়ে তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে সাড়ে ১০টার দিকে বাঁকাকুড়ার কাঁচা রাস্তা দিয়ে তিনজনকে নিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন এফিলিস মারাক। পথে হাতির দল তাদের ওপর আক্রমণ করে। অন্য তিনজন পালিয়ে গেলেও এফিলিসকে হাতির একটি দলে পিষ্ট হয়ে তার মৃত্যু হয়।
আজিজুরের পরিবার জানায়, প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করতেন আজিজুর। বড় মেয়ের বিয়ে দেওয়া হলেও ছোট তিন ছেলে এখনও স্কুলে পড়ে। এফিলিসের ছেলে-মেয়েও ডিগ্রি পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন। দুই পরিবারই আর্থিকভাবে অসচ্ছল।
আজিজুরের স্ত্রী শিউলী আক্তার বলেন, হাতির আক্রমণে তার স্বামী মারা যাওয়ায় পরিবারে আয় করার মতো আর কেউ নেই। বাড়িভিটা ছাড়া তাদের আর কোনো জমিজমাও নেই। ভবিষ্যতে সংসার কীভাবে চালাব জানি না।
এফিলিসের স্ত্রী প্রীতিনাস হাদিমা বলেন, ‘দিনমজুরির কাম কইরা যে টাকা-পয়সা পাইত, তা দিয়ে কোনোরহম সংসার চলত। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর অহন ছেলেমেয়েরে লইয়া কেমনে চলমু।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ভয়েস অব ঝিনাইগাতী’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাহিদুল হক মনির বলেন, পরিবার দুটি দরিদ্র।
কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, উপার্জনক্ষম দুই ব্যক্তির মৃত্যুতে পরিবার দুটি অসহায় হয়ে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
বন বিভাগের গজনি বিট কর্মকর্তা মো. সালেহিন নেওয়াজ জানান, ক্ষতিপূরণ পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. শাহিন কবির বলেন, হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব এড়াতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে বন বিভাগ। তবুও অনাকাঙ্ক্ষিত এ দুটি ঘটনা ঘটে গেল। দ্রুতই প্রতিটি পরিবারকে ৩ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হবে।