রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক
রামু (কক্সবাজার) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ২০:৪২ পিএম
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫ ২০:৪৪ পিএম
নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু সড়কটি বর্তমানে একটি সংকটের মধ্যে পড়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের ফলে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের বেশিরভাগ অংশই খানাখন্দে পরিণত হয়ে চলাচলের জন্য প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সড়কটির প্রস্থ খুবই সংকীর্ণ হওয়ায়, একসঙ্গে দুটি বড় গাড়ি চলাচল করতে গেলে বেশিরভাগ সময়ই যানজট তৈরি হয় এবং চলাচলের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ২০ টনের অধিক ভারী পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকার ফলে সড়কটির অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া সড়কটির পাশে থাকা বেইলি ব্রিজ ও কালভার্টের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা এবং স্থানীয়দের দাবি, সড়কটির প্রস্থ সম্প্রসারণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন একান্তভাবে প্রয়োজন, যাতে দুর্ঘটনা রোধ করা যায় এবং সীমান্ত নিরাপত্তা ও জনসাধারণের চলাচলে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়।
গত বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, ১১ কিলোমিটার রাস্তার বেশিরভাগই খানাখন্দে ভরে গেছে। অনেক জায়গার পিচ উঠে মাটি ও বৃষ্টির পানির সংমিশ্রণে কাদার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খানাখন্দের মধ্যেই চলছে যানবাহন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে এ সড়ক বর্তমানে ১২ ফুট প্রস্থ। এই সড়ক দিয়ে পূরবী বাস গাড়ি, বড় কাঠ বহনকারী ট্রাক এবং নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবির সদস্যের খাদ্য, অস্ত্র, গোলাবারুদসহ তাদের অভ্যন্তরীণ সড়ক উন্নয়নে ব্যবহৃত কাভার্ড ভ্যানের প্রস্থ সাড়ে ৮ ফুট। অপরদিকে দূরপাল্লার মালবাহী গাড়ির চওড়াও সাড়ে ৮ ফুট। দুটি গাড়ি মুখোমুখি হলে যে যানজটের সৃষ্টি হয়ে এ সময় মানুষের হাঁটাও মুশকিল হয়ে পড়ে।
ট্রাকচালক আবদুল জব্বার ও জসিম উদ্দিনসহ কয়েকজন জানান, ঝুঁকি নিয়ে আমাদের গাড়ি চালাতে হচ্ছে। আর এ সড়কের দুপাশে রয়েছে পাহাড়, সড়কটি সংস্কারের পাশাপাশি সম্প্রসারণ করে প্রস্থ না করলে যেকোনো সময়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ‘৫ টনের অধিক ভারী কোনো যানবাহন এ সড়কে চলাচল করতে পারবে না’ বলে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়। এই সংকেত এখন কেউ মানছেন না, প্রতিনিয়ত ২০ টনের অধিক পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলে। এ ছাড়া এ সড়কের ওপর অতিঝুঁকিতে রয়েছে বেশ কিছু বেইলি ব্রিজ ও কালভার্ট।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও এটি সম্প্রসারণ করা ফাইলবন্দি হয়ে আছে। সড়কটি অপ্রশস্ত হওয়ায় গাড়ি চলাচলের জটিলতা দীর্ঘদিনের। দুর্ঘটনা এ সড়কে নিত্যসঙ্গী। মাত্র দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার আর প্রস্থ ১২ ফুট এ সড়কের সংস্কার ও সম্প্রসারণ জরুরি। কারণ সড়কের যাতায়াতকারী ৬ ইউনিয়নের আড়াই লাখ মানুষ ছাড়াও রয়েছে রামু রাবার বাগানে মালামাল নেওয়া-আনার সমস্যা। সীমান্ত সুরক্ষায় নিয়োজিত বিজিবি এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশেষ করে এ সড়কে জারুলিয়াছড়ি ব্রিজসহ ৫টি বেইলি ব্রিজ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।
নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ১১ বিজিবি জোন কমান্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল এসকেএম কফিল উদ্দিন কায়েস বলেন, বিজিবি জওয়ানরা বিভিন্ন অপারেশনে তাদের গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, তাই তিনিও বিভিন্ন দপ্তরের সুপারিশ করার কথা বলেন। সড়কটির প্রস্থ ছোট হওয়ায় দুটি গাড়ি পরস্পরকে সাইড দিতেও অনেক সময় লাগে এবং সীমান্ত নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার জন্য এ সড়কের সম্প্রসারণ প্রয়োজন আছে।
বান্দরবান সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সড়কটি দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করা হবে। একই সঙ্গে রাস্তাটি ১৮ ফুট প্রস্থ করা হবে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এই ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।