এহসানুল হক সুমন, রংপুর
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ১১:১৯ এএম
রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগানে ছায়াযুক্ত স্থানে লটকনগাছ রোপণ করে চমক দেখিয়েছেন আম চাষের সম্প্রসারক আব্দুস সালাম। বাগানের ভেতরে থোকায় থোকায় ঝুলছে পুষ্টিগুণে ভরপুর লটকন। ফলের রঙ হলুদ-সবুজের মিশেল, আকারেও বেশ ভালো। তাপদাহের মাঝে হালকা বাতাসে থেমে থেমে দুলছে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ এই ফল। কিছু লটকন পেকে মাটিতে পড়ে আছে, যা তুলে গ্রামের শিশুরা স্বাদ নিচ্ছে। আব্দুস সালাম প্রতি বছর বাগান থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করছেন। তিনি আম চাষিদের আয় বাড়াতে আম বাগানে লটকন চাষকে সম্ভাবনাময় একটি ফসল হিসেবে দেখছেন।
জানা গেছে, হাঁড়িভাঙ্গা আমের ফলন বছরে মাত্র একবার হয়। ফলে আম চাষিরা বছরে একটি মৌসুমেই আয় করতে পারেন। কেউ কেউ আম বাগানের ছায়াযুক্ত স্থানে কিছু বস্তায় আদা চাষ করলেও তা তুলনামূলকভাবে অনেক কম লাভজনক। এ অবস্থায় আম চাষিদের আয় বাড়ানোর উপায় খুঁজতে শুরু করেন প্রবীণ আম চাষি আব্দুস সালাম।
২০১৪ সালে তিনি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরারহাট এলাকায় তার ৭ একর আয়তনের আম বাগানে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু জায়গায় লটকনের গাছ রোপণ করেন। আম বাগানে ব্যবহৃত সার, সেচ ও সামান্য কীটনাশকেই তিনি লটকন আবাদে সফলতা পান। বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে ২ হাজার ২০০টি লটকনগাছ। বরেন্দ্র অঞ্চলের লাল মাটির কারণে অন্যান্য এলাকার তুলনায় তার বাগানের লটকন হয় মিষ্টি ও সুস্বাদু।
যদিও তার লটকনগাছ এখনও ছোট, তবু প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১২ কেজি থেকে ৩ মণ পর্যন্ত ফলন হচ্ছে। তিনি প্রতি বছর প্রায় এক হাজার কেজি লটকন উৎপাদন করছেন, যা পাইকারদের কাছে প্রতি মণ ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন।
আম চাষি আব্দুস সালাম বলেন, ‘হাঁড়িভাঙ্গা আমের সম্প্রসারণে আমি নিরলস পরিশ্রম করেছি। এর ফলেই মিঠাপুকুরসহ পুরো রংপুর অঞ্চলে এখন চাষিরা ধান ও পাটের পরিবর্তে আম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। হাঁড়িভাঙ্গা আম এখন জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এরপর আমার মনে প্রশ্ন জাগেÑ কম খরচ ও পরিশ্রমে আম বাগানে কী এমন ফসল চাষ করা যায়, যা আয় বাড়াতে সাহায্য করবে? নরসিংদী গিয়ে দেখি ছায়াযুক্ত স্থানে লটকন চাষ হচ্ছে। আমি নিজেও আম বাগানের ছায়ায় লটকনগাছ লাগিয়ে চমৎকার ফল পেয়েছি।’
তিনি বলেন, লটকন একটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ প্রচলিত ফল, যার বাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এটি আম বাগানে চাষের উপযোগী হওয়ায় আম চাষিদের লটকন চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে একই জমিতে, একই যত্নে ও একই সারে দুটি ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। ফলে চাষিদের বাড়তি আয় নিশ্চিত হচ্ছে। যদি এই তথ্যটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে তা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অঞ্চলের মাটি যেমন হাঁড়িভাঙ্গা আমকে মিষ্টি করেছে, তেমনি সেই মাটিতেই উৎপাদিত লটকনও হচ্ছে মিষ্টি ও সুস্বাদু। আমার বাগানে উৎপাদিত লটকনের প্রতি বছরই ব্যাপক চাহিদা থাকে, পাইকাররা সরাসরি বাগান থেকেই সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতি বছর আমাদের কৃষিজমি কমছে। একই জমি ব্যবহার করে অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা কৃষকদের ভালো উদ্যোগগুলো মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি।’