তরিকুল ইসলাম, ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর)
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ১১:১৩ এএম
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া পৌরসভায় সড়ক ও মহাসড়কে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যানবাহন থেকে অতিরিক্ত টোল আদায় করছে ইজারাদারদের লোকজন। অবৈধ টোল আদায়ে পরিবহন শ্রমিকরা হচ্ছেন হেনস্থার শিকার।
সড়কে মহাসড়কে অতিরিক্ত টোল আদায়ে যাত্রীদের গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া। ভাণ্ডারিয়ায় সড়কে-মহাসড়কে টোল আদায়ে উচ্চ আদালত থেকে রুল জারি করা হলেও তা মানছে না কেউ।
টোল আদায়কারী ইজারাদার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সহ-সভাপতি জুয়েল মৃধা। তিনি জবরদস্তিভাবে অতিরিক্ত টোল আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
টোল আদায়ে হয়রানি বন্ধে স্থানীয় নেসার উদ্দিন জিহাদ মিয়া সম্প্রতি উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। ইজারাদার কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা জুয়েলসহ সাতজনকে বিবাদী করে উচ্চ আদালতে ৭২৯৩ নম্বর রিট আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ফাতেমা নাজিব ও বিচারপতি সিকদার মাহমুদুর রাজির বেঞ্চ গত ১৩ মে বিবাদীদের বিরুদ্ধে যানবাহন থেকে টোল আদায় কেন বেআইনি নয়, এই মর্মে একটি রুল জারি করেন।
সেই আদেশ উপেক্ষা করেও পৌরসভার ব্যস্ততম এলাকায় যানবাহন থামিয়ে দ্বিগুণ টাকা ধার্য করে জোর করে টোল আদায় করা হচ্ছে।
উচ্চ আদালতে রিট আবেদনকারী বলেন, আমি জনস্বার্থে তিনি এই রিট করেছি। বাংলাদেশে কোথাও দেখিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক দিয়ে যেকোনো পরিবহন চলাচল করতে হলে পৌরসভার টোল দিয়ে হয়। ভাণ্ডারিয়া শুধু পৌর টোল দিতে হচ্ছে, এ কারণে রিট করা হয়েছে। এটি হয়রানি ও বেআইনি।
জানা গেছে, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া পৌরসভা এলাকার সড়কে বিভিন্ন যানবাহনের কাছ থেকে টোল আদায়ের জন্য তৎকালীন ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার প্রশাসক ইয়াছিন আরাফাত রানা পৌর টোল আদায়ে শহরের ৬টি স্থানে ইজারা দেন। স্থানগুলো হচ্ছেÑ ভুবনেশ্বর সেতুর দক্ষিণ পাড় ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৭৫ টাকা, এনায়েত খান সেতুতে ১৭ লাখ ৮২ হাজার ১২৫ টাকা, শহরের প্রাণকেন্দ্রের ওভারব্রিজের পশ্চিম পাড় ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, সোনার তরী কাউন্টারের সামনে ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা, আলফা মসজিদের সামনে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৭৫০ টাকা, বাসস্ট্যান্ড ৩১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা ইজারা মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
ভাণ্ডারিয়া পৌরসভা দেশের দক্ষিণ জনপদের যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হওয়ায় দৈনিক ছোটবড় মিলিয়ে কয়েক হাজার যান চলাচল করে। এ ছাড়া শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কেও প্রচুর যান চলাচল করে। ২০১৫ সালে উপজেলা শহর পৌরসভায় রূপান্তরিত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর তারিখে ৪৬.০০.০০০০.০৬৩.৩১.০০২.১৩-২২৫৪ নম্বর স্মারকে টোল আদায় না করার জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু সরকারি নির্দেশের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে একটি সুবিধাবাদী মহল ইজারা নিয়ে টোল আদায় শুরু করে। প্রশাসন টোল আদায় বন্ধ করতে পারেনি। উপরন্তু এ বছরের মার্চের ৬ তারিখে ভাণ্ডারিয়া পৌর প্রশাসক উপজেলার রাজপাশা গ্রামের জুয়েল মৃধাকে পৌরসভার টোল আদায়ের ইজারা দিয়েছে। এরপর থেকে সড়ক পরিবহনে টোলের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভাণ্ডারিয়া পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আক্তার অবৈধ টোল উত্তোলনের বিষয় বলেন, ‘আমি কর্মস্থলে অতিসম্প্রতি যোগ দিয়েছি। এখানে টোল আদায়ে আগে ইজারা দেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পেয়েছি। নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ টোলের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’