সাইদুল ইসলাম মন্টু, বেতাগী (বরগুনা)
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ১১:০৮ এএম
বরগুনার বেতাগীতে কোরবানির ঈদের টানা বন্ধ ৯১ হাজার ৬৮৪ গবাদিপশু ও ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৫৭৮ হাঁস-মুরগির খামারি ও চাষি সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে ছুটতে হয়েছে পল্লী ও হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে। এতে অনেক গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি মারা গেছে।
উপকূলীয় এ এলাকা যেন পশু মৃত্যুর জনপদে পরিণত হয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, ঈদের টানা সরকারি ছুটির সময়ে এ উপজেলায় কৃষক ও খামারিরা, তাদের গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় ছিলেন।
গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত টানা বন্ধে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী ৩ শতাধিকেরও বেশি কৃষকের ষাঁড়, গাভি ও ছাগল আকস্মিকভাবে মারা গেছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুগ্ধ উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত এ উপজেলার পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারি হিসাবমতে ৩৫টি বড় দুগ্ধ খামার, প্রান্তিক পর্যায়ের ৬ হাজার ১৩৫টি ছোট-বড় দুগ্ধ ও গরুর খামার, ছোট-বড় ৪ হাজার ৫২৮টি ছাগল এবং বড় ধরনের পোল্ট্রি ৮৫, ছোট-বড় ১৩ হাজার ৪৯৪টি খামার গড়ে উঠেছে। উপজেলা পশু হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় দুশ সেবাগ্রহীতা খামারি ও গবাদিপশুর মালিক সেবা নিতে আসে।
উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এর সামনে বেশ কজন সেবাপ্রার্থী দাঁড়িয়ে আছেন।
তাছাড়াও মূল ফটকের বাইরে হাসপাতাল চত্বরে একটি বাছুর (গরুর বাচ্চা) ও একইভাবে তিনটি ছাগল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন দুজন সেবাপ্রার্থী। উপজেলার হোসনাবাদ গ্রাম থেকে ছাগলের জন্য পরামর্শ চাইতে এসেছিলেন আয়শা বেগম নামের এক নারী। তিনি বলেন, ‘তার তিনটি ছাগল আছে। একটা মা ছাগল আর দুটি বাচ্চা ছাগল। কয়েক দিন ধরে বাচ্চা দুটি ঠিকমতো খাচ্ছে না। তাই তিনি পরামর্শ নিতে এসেছেন। কিন্তু্ এসে দেখেন পশু হাসপাতাল বন্ধ।’
উপজেলা খামারি মালিক সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দীন পিযুষ বলেন, ‘ঈদে টানা বন্ধের ফলে এখানকার গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামারি ও চাষি পশু হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নিরুপায় হয়ে সেবার জন্য খামারি ও চাষিরা পল্লী ও হাতুড়ে ডাক্তার ধরেছে। এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। বরং ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। তাই যেকোনো বন্ধের সময়েও পশু হাসপাতালে বিশেষ চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা থাকাটা জরুরি। সাধারণ হাসপাতালে জরুরি ব্যবস্থা থাকে, তাহলে পশু হাসপাতালে থাকবে না কেন? মানুষের রোগব্যাধি যে কোনো সময় হতে পারে, অনুরূপ পশুরাও যেকোনো সময় রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। এটা পশু হাসপাতালের কর্মকর্তাদের মনে রাখা দরকার ছিল।’
উপজেলা খামারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মৃধা বলেন, ‘ঈদের ছুটির গ্যাঁড়াকলে উপজেলার কোনো খামারিই পশু হাসপাতাল থেকে কোনো সেবা পায়নি। ফলে বিনাচিকিৎসায় প্রচুর গরু মারা গেছে। প্রতিদিনই গবাদিপশু মারা যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে।’
উপজেলা পশু হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ইকবাল মিয়া বলেন, ‘পশু হাসপাতালে ঈদের ছুটির সময়ে জরুরি বিভাগ চালু রাখার বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। এটা সংশ্লিষ্ট বিভাগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়।’