জামালপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫ ২৩:১৮ পিএম
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চরচারিয়া গ্রামে ফসলি জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ এখন রূপ নিয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রাণহানিতে। শত বছরের পৈতৃক জমি রক্ষার দাবিতে একপক্ষের প্রতিরোধ এবং অন্যপক্ষের দখল প্রচেষ্টায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।
সংঘর্ষে আহত অন্তত ২০ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুতে ঘটনাটি আরও জটিল আকার ধারণ করে, যা শেষ পর্যন্ত হত্যা মামলায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় আবারও বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চরচারিয়া গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন ও তার বংশীয় প্রায় ৫০টি পরিবার দীর্ঘ একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ৭ একর ২৩ শতাংশ জমি ভোগদখল করে আসছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, একই গ্রামের বাক্কার আলী ও তার অনুসারীরা একটি সাজানো মামলার সূত্র ধরে জমিটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছিলেন। গত ১৯ মে রাতে বাক্কার আলীর নেতৃত্বে শতাধিক লোক জমির একাংশের পাকা ধান কেটে নেয় এবং সেখানে কয়েকটি অস্থায়ী টিনের ঘর নির্মাণ করে। একই সঙ্গে তিনটি সেচ পাম্প সরিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পরদিন সকালে মূল মালিকপক্ষ ক্ষেতে গেলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ, যাতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন।
সংঘর্ষের পর পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ছয়জনকে আটক করে। পরে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করে।
ওই ঘটনার ছয় দিন পর, ২৫ মে আহতদের একজন আ. আজিজ মারা যান চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এতে মামলা রূপ নেয় হত্যা মামলায়। ফলে এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং মূল মালিকপক্ষ আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে যায়। এই সুযোগে দখলকারীরা জমিতে স্থায়ী ঘর নির্মাণ ও চাষাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জমির মালিক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এ জমি ভোগ করছি। জমির দলিল, আরওআর রেকর্ড, বিআরএস রেকর্ড ও খাজনা খারিজ আমাদের নামে। আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও জোরপূর্বক জমি দখল করে আমাদের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।’
অন্যদিকে অভিযুক্ত পক্ষের নেতা বাক্কার আলী দাবি করেন, ‘ওই জমি নিয়ে আমাদের পক্ষেও মামলা রয়েছে। সেই মামলার আলোকে আমরা জমি দখল নিয়েছি।’
পলবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান কমল বলেন, জমিটি দীর্ঘদিন ধরে জামাল উদ্দিনের দখলে ছিল। হঠাৎ সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছি।
ইসলামপুর থানার ওসি সাইফুল্লাহ সাইফ জানান, আদালতের মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত জোর করে জমি দখল বেআইনি। অবৈধ স্থাপনা সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।