প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫ ২১:৪৪ পিএম
আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫ ২১:৪৮ পিএম
দেশের বিভিন্ন জেলায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একাধিক গ্রামে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গোপালগঞ্জ, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে পৃথকভাবে সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫৩ জন আহত হয়েছেন। কোথাও সুদের টাকা লেনদেন, কোথাও আম ওজন দেওয়া কিংবা অটোরিকশা দাঁড় করানোকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এসব সংঘর্ষে গ্রামবাসীদের মধ্যে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এসব ঘটনায় অন্তত ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে। অফিস ও প্রতিবেদকদের পাঠানো খবরÑ
গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সুদের টাকার লেনদেন নিয়ে বিরোধের জেরে শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে হিরণ ইউনিয়নের মাঝবাড়ি ও বংকুরা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে কোটালীপাড়া থানার এসআই সেলিম মাহমুদ ও তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এই সংঘর্ষে পুলিশ ২৫ রাউন্ড শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং ঘটনাস্থল থেকে ৪৫ জনকে আটক করে। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, বংকুরা গ্রামের রিয়াজুলের কাছ থেকে মাঝবাড়ি গ্রামের ফারুক দাড়িয়া সুদে টাকা নেয়। সময়মতো সুদের অর্থ পরিশোধ না করায় সকালে দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এর জেরে সকাল ৯টার দিকে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এরপর উভয় গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্র, ঢাল-সড়কি নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশের হস্তক্ষেপেও তা থামানো সম্ভব হয়নি। পুলিশের এসআই সেলিম মাহমুদসহ চার পুলিশ সদস্য ও উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হন। পুলিশ গুলি ছুড়লেও সংঘর্ষ থামেনি। বেলা ১১টার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহতদের কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কোটালীপাড়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুটি গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ২৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী : রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের চককৃষ্টপুর ও জাহাঙ্গীরাবাদ গ্রামের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আম ওজন দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জাহাঙ্গীরাবাদ গ্রামের ছিয়ার উদ্দিন চককৃষ্টপুর মোড়ে তমজিদের দোকানে আম ওজন দেন। ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগে কথাকাটাকাটি শুরু হলে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। খবর পেয়ে ছিয়ারের ভাতিজা জুয়েলের নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চককৃষ্টপুরে হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৮ জন আহত হন। তাদের মধ্যে মামুন, রাব্বি এবং মহির উদ্দিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে দুই গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে আর না ঘটে এ জন্য পুলিশ তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার দত্তপুর ও উত্তর পালাহার গ্রামের মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশা দাঁড় করানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার বেলা ১১টার এই সংঘর্ষ হয়।
বেলালাবাদ দত্তপুর বাজারে মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা দাঁড় করানোকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়, যা পরে দেশীয় অস্ত্র ও ইটপাটকেল নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে অনেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা গেছে, মোটরযান কর্মচারী সমিতির ২৯ সদস্যের কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই গ্রামের মধ্যে মতবিরোধ চলছিল। এ ঘটনায় দত্তপুর ও উত্তর পালাহার গ্রামের লোকজন একে অন্যকে দায়ী করেছে।
নান্দাইল মডেল থানার ওসি বলেন, চাঁদাবাজি ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।