হবিগঞ্জ
আশরাফুল ইসলাম কহিনুর, হবিগঞ্জ
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫ ১৬:২৯ পিএম
আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫ ১৬:৩৪ পিএম
জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ প্রান্তে এসে হবিগঞ্জের পাহাড়ি টিলা ও সমতল অঞ্চলে পাকা কাঁঠালের সুমিষ্ট ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। হাটবাজারে এখন জাতীয় ফল কাঁঠালের ব্যস্ততম সময়। পাহাড় ও হাওর অধ্যুষিত এই জেলায় এ বছর কাঁঠালের আশানুরূপ ফলন ও ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল পাহাড়ি এলাকা থেকে আনা হচ্ছে পাইকারি বাজারে। পাইকারদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে বাহুবলের মুছাই ও চুনারুঘাটের চন্ডিছড়া বাজার।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার পাহাড়ি টিলা ও সমতলে এবার ব্যাপক হারে কাঁঠালের চাষ হয়েছে। জেলায় প্রায় ৩ হাজার ১০০ একর জমিতে কাঁঠাল উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি একরে ফলন হয়েছে গড়ে ৫-৬ মেট্রিক টন।
বাহুবলের মুছাই ও চুনারুঘাটের চণ্ডিছড়া বাজারে প্রতিদিন চলছে কাঁঠালের পাইকারি কেনাবেচা। এখানে বেশ কয়েকটি আড়তে কাঁঠাল নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হয়। প্রতিটি কাঁঠালের দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। আকারভেদে প্রতি শ কাঁঠালের দাম ৭ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠছে বলে জানান আড়তদাররা। এই কাঁঠালগুলো জেলার বিভিন্ন বাজার ছাড়াও ট্রাকে পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
মুছাইর ফলের আড়তের মালিকরা জানান, এ বছর কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো। এতে করে চাষিদের মাঝে উৎসাহ দেখা দিয়েছে। চাষিরা জানান, কাঁঠাল একটি সহায়ক ফসল। খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না। উৎপাদন খরচও কম। ফলে লাভ বেশি হয়। কাঁঠাল শুধু ফল হিসেবে নয়, গাছের পাতা ও উচ্ছিষ্ট অংশ গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। কাঁঠালগাছ বহু বছর ধরে ফল দেয়, তাই এটি দীর্ঘমেয়াদি লাভজনক বিনিয়োগ।
চুনারুঘাটের কালেঙ্গার পাহাড়েরর চাষি বিনয় দেব বর্মা বলেন, আমার বাগানে সহযোগী ফসল হিসেবে কাঁঠাল চাষ করি। ফলনও ভালো হয়েছে, বাজারে ভালো দামও পাচ্ছি। নবীগঞ্জের দিনাজপুর এলাকার সুজন মিয়া, বাহুবলের তোরাব আলী মোল্লা ও তাহির মিয়াও সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জানান, এই ফল উৎপাদনে কম খরচে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, মুছাই ও চণ্ডিছড়া বাজারে পাহাড়ি কাঁঠাল পাওয়া যায়। আমি ৫০০ টাকায় ৩টি কাঁঠাল কিনেছি। খেয়ে খুব তৃপ্তি পেয়েছি।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মিঠুন রায় বলেন, ফলের রাজা আম হলেও কাঁঠাল পুষ্টিগুণে অনন্য। এতে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-এ, সি, বি-১, বি-২, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা উপাদান আছে; যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখে এবং ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়।
বাহুবলের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, কাঁঠাল স্বাদে ও পুষ্টিতে ভরপুর, সবার কাছেই প্রিয়। বিশেষ করে এই সময়ে গ্রামের লোকজনের প্রধান খাদ্যতালিকায় চলে আসে এটি। এমনকি কাঁঠালের যে উচ্ছিষ্ট অংশ, তাও ব্যবহার করা হয় গোখাদ্য হিসেবে। অর্থাৎ একটি কাঁঠাল বহুমুখী ভোগের পণ্য।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আকতারুজ্জামান জানান, সরকারিভাবে কাঁঠাল উৎপাদনে চাষিদের আগ্রহ বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাঁঠালগাছের প্রতিটি অংশ ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় এটি একটি লাভজনক ফসল। তবে বন্যামুক্ত এলাকায় গাছ রোপণ করাই উত্তম, কারণ এই গাছ পানিতে টিকতে পারে না।