× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টি

বাড়ছে নদ-নদীর পানি প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫ ২২:১৩ পিএম

বাড়ছে নদ-নদীর পানি প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল

ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল এবং টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে লালমনিরহাট, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া দিয়ে বয়ে চলা নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েকটি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে খামারিদের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়েছে অনেক মানুষ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন।

সিলেটে দুই নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেটের দুটি নদীর দুই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি পয়েন্টে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। নগরের ভেতরে অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকেছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, রবিবার (১ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটের সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৭১ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহত হয়েছে। এ ছাড়া কুশিয়ারার অমলশিদ পয়েন্টে বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৭৩ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়াও জেলার লোভা, সারি-গোয়াইন ও ধলাইসহ সব কয়টি নদ-নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সারি ও ডাউকির পানি সামান্য কমেছে।

এদিকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় গত শনিবারের মতো রবিবারও সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদ-নদীর পানি বাড়ায় জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলে দ্রুত পানি বাড়ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, শনিবার সকাল ৬টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৪০৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার হিসাবে চলতি বছর এটাই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫৮২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজারের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে

গত দুই দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের সব কয়টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার সাত উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদরের কেন্দ্রবিন্দু দিয়ে প্রবাহমান মনু নদের চাঁদনীঘাট পয়েন্টে রবিবার বেলা ৩টার দিকে পানি বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার এবং একই নদীর রেলওয়ে ব্রিজ এলাকায় বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে কয়েকশ পরিবার।

এদিকে কুলাউড়ায় জয়চণ্ডী, কুলাউড়া সদর ও পৃথীমপাশা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার হাকালুকি হাওরেও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বড়লেখা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন পানির নিচে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে রাস্তাঘাট। ঢলের পানিতে ভেসে গেছে খামারিদের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুমসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে। ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত বড়লেখা পৌরসভা ও উজানের ৩টি ইউনিয়নের ১৪৪টি পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বড়লেখা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর অফিসে বন্যাক্রান্ত এলাকায় বিতরণের জন্য ৩০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১৬০টি জারিক্যান, ৫০ কেজি ব্লিচিং পাউডার মজুদ রয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় এগুলোর বিতরণ কার্যক্রম চলমান। পরিস্থিতির অবনতি হলে জেলা অফিসে সংরক্ষিত মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে আক্রান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ বলেন, ‘ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বৃষ্টিপাত অনেকটা কমেছে। আর যদি সেখানে বৃষ্টিপাত না হয় বা কম হয়, তবে আমাদের খরস্রোতা নদ-নদীগুলোর পানি কমতে থাকবে। বন্যা নিয়ে এখনই আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’

আখাউড়া সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর এলাকার আশপাশের সীমান্তবর্তী কয়েক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

রবিবার সরেজমিন দেখা যায়, স্থলবন্দরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কলন্দি খাল, কালিকাপুর হয়ে আব্দুল্লাপুর দিয়ে জাজি গাং, বাউতলা দিয়ে মরা গাং ও মোগড়া ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওড়া নদী দিয়ে অস্বাভাবিকভাবে পানি ঢোকার কারণে তলিয়ে গেছে ওই সব গ্রামের রাস্তাঘাট।

এতে উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিকাপুর, বীরচন্দ্রপুর, আব্দুল্লাহপুর, বঙ্গেরচর গ্রামের জমি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে এবং কেন্দুয়াই মেলার মাঠ এলাকায় ১৫টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের মৎস্য রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক মিয়া বলেন, গত রাত থেকে পানি ঢুকছে। বন্দরের আশপাশ তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে পানি যেভাবে বাড়ছে এতে করে আখাউড়া-আগরতলা সড়ক তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে দুই দেশের বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় করছি।

এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিএম রাশেদুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে আমরা হাওড়া নদীসংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করেছি।

সুনামগঞ্জে বন্যার সতর্কতা

সুনামগঞ্জে কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে বন্যার আভাস দেখা দিয়েছে। এতে আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পশু বিক্রেতা ও খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। দায়িত্বশীলরা বলছেন, আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এরকম ভারী বৃষ্টিপাত হলে জেলার প্রতিটি নদীর পানি বাড়বে, কোনো কোনো জায়গায় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বন্যার সতর্কতার জন্য পশুর মালিকদের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেছে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।

জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এখনও মাঠে আউশ ধান ২ হাজার ৪৫৬ হেক্টর, পাট ৪০৫, গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ৪২৪, মুগডাল ১৭, তিল ৩৫, মরিচ ৪৩ হেক্টর রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ছাতক উপজেলার ৩ হেক্টর আউশের ক্ষেত প্লাবিত হয়েছে। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি উপজেলায় দুটি করে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন ও পর্যাপ্ত ওষুধ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে তাহিরপুরে বন্যা সতর্কতার জন্য ৭টি ইউনিয়নে ৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাসেম।

তিস্তায় পানি বৃদ্ধি, খোলা হয়েছে ৪৪ জলকপাট

লালমনিরহাটে উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে তিস্তার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাবিত হ‌ওয়ার শঙ্কায় রয়েছে চরাঞ্চলের মানুষ ও নদী তীরবর্তী এলাকা। শনিবার রাত থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে রবিবার সকাল ৯টায় দেশের সর্ব বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে খুলে দেওয়া হয়েছে ৪৪টি জলকপাট।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে রবিবার দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন তিস্তা অববাহিকায় ঝড়ো হাওয়াসহ থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। সেই সাথে উজান থেকে আসা ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জমিতে থাকা ফসল ভেসে যাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পানি ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সিলেট অফিস, মৌলভীবাজার, বড়লেখা, কুলাউড়া, আখাউড়া, সুনামগঞ্জ ও লালমনিরহাট প্রতিবেদক)

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা