× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

টানা বৃষ্টিতে ব্যাপক পাহাড় ধস চারজনের মৃত্যু

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫ ২১:৫২ পিএম

টানা বৃষ্টিতে ব্যাপক পাহাড় ধস চারজনের মৃত্যু

টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ও সিলেটে ব্যাপক পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। ধসের কারণে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বাড়িঘর, দোকানপাট ভেঙে যাওয়া ও একাধিক স্থানে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে লাগাতার বৃষ্টির ফলে নদী-খালে পানি বাড়ছে, যার কারণে এই এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকা এবং টানা বৃষ্টিপাত চলতে থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পাশাপাশি খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকদের পাঠানো প্রতিবেদনে বিস্তারিত :

সিলেটে টিলাধসে একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু

টানা বৃষ্টিতে সিলেটের গোলাপগঞ্জে টিলাধসে শিশুসহ একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার রাত ২টার দিকে বখতিয়ারঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, গোলাপগঞ্জের ইউএনও ফয়সাল মাহমুদ ফুয়াদ। তিনি জানান, রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহতরা হলেনÑ লক্ষ্মণাবন্দ ইউনিয়নের বখতিয়ারঘাট এলাকার রিয়াজ উদ্দিন, তার স্ত্রী রহিমা বেগম এবং তাদের সন্তান সামিয়া খাতুন ও আব্বাস উদ্দিন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রিয়াজের বসতঘরের অবস্থান টিলার পাদদেশে। শনিবার রাতে সেখানে ধস হলে ঘরে থাকা রিয়াজসহ চারজন মাটিচাপা পড়ে। চিৎকার শুনে স্থানীয়রা মাটি সরানোর চেষ্টা করে, তবে তারা ব্যর্থ হন। পরে প্রশাসনের লোকজন মৃতদেহ উদ্ধার করে।

গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মোল্লা বলেন, ‘টিলাধসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও আমরা মিলে চারজনের লাশ উদ্ধার করেছি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য প্রক্রিয়াধীন।’

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ধস, বন্যার শঙ্কা

খাগড়াছড়িতে টানা চার দিন ধরে চলছে ভারী বৃষ্টিপাত। ফলে জেলার একাধিক স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর, দোকানপাট ভেঙে গেছে। পাহাড়ধসে কয়েকটি জায়গায় রাস্তাঘাট সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি ও রেডক্রিসেন্টের সদস্যদের সহযোগিতায় চলাচল সচল হয়। এ ছাড়া, লাগাতার বৃষ্টির ফলে নদী-খাল উপচে পানি বাড়ছে, যার কারণে জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের একটি বিশেষ টিম বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে মাইকিং করে স্থানীয়দের সতর্ক করছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলছি। যেসব পরিবার ঝুঁকিতে আছে, তাদের দ্রুত সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।’

জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার সার্বিকভাবে পরিস্থিতি মনিটর করছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিটি উপজেলায় জরুরি সাড়া দিতে প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় প্রশাসনের টিম।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, খাগড়াছড়ি অঞ্চলে আগামী দুই দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন।

পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি শুকনো খাবার ও ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

রাঙামাটিতে পাহাড়ধস, প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল

টানা ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি। এ ছাড়া জেলার সদর, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, নানিয়ারচর উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকা এবং টানা বৃষ্টিপাত চলতে থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য বারবার মাইকিং করা হচ্ছে। 

রবিবার (১ জুন) রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মঘাছড়ি, লংগদু উপজেলার করল্যাছড়ি এবং কাপ্তাই উপজেলায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া জুরাছড়ি উপজেলায় গ্রামীণ সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় রাঙামাটির জেলায় ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে ৬৭২ জন আশ্রয় নিয়েছে। দুর্গতদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এদিকে সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢলে প্রায় ২০০টি পরিবার প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগ বন্ধ রয়েছে বেশ কিছু এলাকায়।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার জানান, পৌর এলাকার আশপাশে কয়েকটি গ্রামে পানি উঠেছে। উপজেলার ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজনের উপস্থিতি কম।

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমিন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে।

রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত আসমা জানান, সদর উপজেলায় সাপছড়ি ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। প্রায় ২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর রাঙামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, রাঙামাটি জেলার সড়কগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ছোটখাটো ১৫টি ধসের ঘটনা হলেও সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। সড়কে যান চলাচল সচল রাখতে আমাদের টিম সব সময় কাজ করছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জেলায় মোট ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইমারজেন্সি টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে আসার আহ্বান করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনদের পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

লামায় ৬০টি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসে প্রাণহানির শঙ্কায় বান্দরবানের লামা উপজেলায় ৬০টি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। রবিবার লামা উপজেলা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা প্রস্তুতি কমিটির এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে লামা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মঈন উদ্দিন। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢালুতে অবস্থিত রিসোর্টগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রাণহানির সম্ভাবনা রোধে মিরিঞ্জা ভ্যালিসহ লামার বিভিন্ন পর্যটন স্পটের রিসোর্টগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে পুনরায় রিসোর্টগুলো খুলে দেওয়া হবে।’

বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টির ফলে সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাকখালী নদীর পানির স্তর বেড়েছে, তবে এখনও তা বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলার সাতটি উপজেলায় ২২০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিওদের সমন্বয়ে ‘দুর্যোগকালীন জরুরি সেবা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করেছেন, সিলেট অফিস, খাগড়াছড়ি , রাঙামাটি ও কাপ্তাই , লামা-আলীকদম ও বান্দরবান প্রতিবেদকরা]।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা