জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলা
রংপুর অফিস
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫ ২০:৫২ পিএম
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রংপুর। জাতীয় পার্টির সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঘটনা তদন্তে নেমেছে সেনাবাহিনী।
শনিবার (৩১ মে) মধ্যরাতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি ও বিএনপির নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ ঘটনা শুনে তৎক্ষণাৎ ছুটে আসেন উত্তরাঞ্চল সফরে থাকা এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলাসহ উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে এনসিপির অবস্থান তিনি সেনাবাহিনীর কাছে তুলে ধরেন। এ সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সারজিস আলমকে বলেন, ‘শরীরে যতক্ষণ রক্ত আছে, উই আর নট গোয়িং টু প্রমোট এনিওয়ান, যে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে। আপাতত স্ট্যান্ডিং হলো, যে জনগণের অসুবিধা করে, ভ্যান্ডালিজম (নাশকতা) করে, মবের নামে যে আগুন লাগায়, ঘরদোর ভাঙচুর করে, এই পার্টিটাকে বার্তা দেওয়া যে, না, এইটা করার সুযোগ নেই এখন।’
জানা যায়, শনিবার রাত ১০টা থেকে নগরীর পায়রা চত্বরে অবস্থান করছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রাত ১টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেই সেখানে আসেন সেনাবাহিনীর ৭২ ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমসহ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। এরপর জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। কিছুক্ষণ পরই পায়রা চত্বরে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি, জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব অ্যাড. মাহফুজ-উন-নবী ডন, জেলা সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি ও জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদকে জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনার দিনের ফুটেজ দেখান। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সংগঠকের উপস্থিত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয় সেনাবাহিনী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকদের সেনাবাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ করছে এমন খবর শুনে নগরীর পায়রা চত্বরে ছুটে আসেন উত্তরাঞ্চল সফরে থাকা এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। এ সময় তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলেন।
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়েছে। আমরা সহিংসতার পক্ষে না। আমরা কখনও এমন কিছু করতে চাইনি। আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে অস্ত্র হাতে হামলাকারীদের শনাক্তের দাবি জানিয়েছি। আমাদের সেনাবাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, আমরা তাদের সহযোগিতার কথা জানিয়েছি।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, সেনাবাহিনী আমাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল। তারা জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলাকারীদের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমি বলেছি কারা হামলা করেছে তা আমি জানি না। এরপর তারা ভিডিও দেখালে আমাদের দলের একজন কর্মীকে শনাক্ত করতে পেরেছি। আমাদের দলের প্রধান তারেক রহমান বলেছেন, কেউ সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে আমাদের দলের কেউ থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আমি ঢাকার উদ্দেশে যাওয়ার পথে বৃষ্টির জন্য রংপুরে থেমেছি। আমি জানতে পারলাম জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনায় রাতে সেনাবাহিনীর টিম বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতেই পারে, তবে রাত ১টায় জিজ্ঞাসাবাদ করা একটু দৃষ্টিকটু। আমরা সবাই সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। দিনের যেকোনো সময় তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে।
৭২ ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিক একটি ঘটনায় নগরীতে শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হওয়ার সূত্রপাত হয়েছে। কারা দোষী তাদের চিহ্নিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যাদের সাহায্য নিলে আমরা হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পারব তাদের ডেকেছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকদের ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে কয়েকজন শনাক্ত হয়েছে এবং তারা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রংপুর এলাকায় শান্তি নষ্ট হয় এমন কাজ তারা করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। আমাকে সহযোগিতা করলে আমরা প্রকৃত অ্যাকশনে যেতে পারব।